খেলাধুলা

ক্রিকেটারদের চাপ কমাতে নাঈমুরের প্রেসক্রিপশন

যদিও তৃতীয় দিন খানিক প্রতিরোধের দেয়াল গড়ার চেষ্টা টাইগারদের। কিন্তু প্রথম দু’দিন বোলিং, ফিল্ডিং, কিপিং ও ক্যাচিংয়ে ব্যর্থতার ঘানি টেনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া। অনেকেরই মত, নিজ মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে বিরাট কোহলির ভারত যত উদ্যমী, ভালো খেলতে যারপরনাই সংকল্পবদ্ধ এবং ব্যাট ও বলে নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে সচেষ্ট, মুশফিক বাহিনী ততটা নয়। তাদের সামগ্রিক অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন, শরীরী ভাষা ও পারফরম্যান্স কোনোটাই ইতিবাচক মনে হয়নি। ভারতের মতো দুর্ধর্ষ দল এবং কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তাদের মাটিতে ভালো করতে হলে যে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দেয়ার আন্তরিক ইচ্ছা এবং বাড়তি মনোযোগ- মনোসংযোগ থাকার প্রাণবন্ত চেষ্টা প্রয়োজন- তার অনেকটারই অভাব।কারো কারো মত, এ দলটি ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের বিপক্ষে লড়াই করার জন্য আসলে অপ্রস্তুত। কখনো আড়ষ্ট, কখনো নার্ভাস এবং কোনো কোনো সময় দায়িত্ব- কর্তব্যবোধের অভাব পরিষ্কার। ৯৮ নম্বর টেস্টে গিয়ে এত আড়ষ্টতা কেন?তা নিয়ে নানা প্রশ্ন। জল্পনা-কল্পনা। কেউ কেউ বলছেন, টিম বাংলাদেশ একটু বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলেছে। ক্রিকেটারদের মনে গেঁথে গেছে, ১৬ বছর পর ভারতের মাটিতে খেলতে এসেছি আমরা। অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় এই চাপ কাটানোর একটা ফর্মুলা দিয়েছেন। তার অনুভব, এ টেস্ট যে ঐতিহাসিক, ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম টেস্ট লড়াই- ক্রিকেটারদের সে চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। এটা এক ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। এর গুরুত্ব, মর্যাদা অন্য ম্যাচগুলোর চেয়ে বেশি- ক্রিকেটাররা যেন কোনোভাবেই ওই চিন্তা না করে। তাহলে পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে, অনুজপ্রতিম ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে বার্তা নাঈমুর রহমানের। তার ভাষায়, ‘আমরা ১৭ বছরের মাথায় এসে ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে এসেছি। এ দীর্ঘ সময়ে বিশ্বের সব দেশে টেস্ট সিরিজ খেলা হলেও ভারতে আগে কখনই টেস্ট খেলা হয়নি। এটাই প্রথম। তাই এ ম্যাচ ঘিরে একটা অন্যরকম বার্তাবরণ তৈরি হয়েছে। বাড়তি আবেগও কাজ করছে কারো কারো মনে। তবে আমি মনে করি ওই আবেগটা বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ড, দু’দেশের দর্শক-সমর্থক এবং প্রচারমাধ্যমের কাছে বেশি। তাদের কাছে এ টেস্টের আবেদনও ভিন্ন। সেখানে আবেগ আছে। আছে বাড়তি উচ্ছ্বাসও।’ ‘গত ১৬ বছরে যা হয়নি, এবার তা হচ্ছে। আমরা ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলছি। এটা আমাদের বোর্ডের এমন আবেগ কাজ করতেই পারে। কিন্তু আমি কিছুতেই চাই না, সে আবেগ ক্রিকেটারতের স্পর্শ করুক। আমি চাই মুশফিক, তামিম, সাকিবরা এটাকে অন্যভাবে নেবে। দু’দেশের বোর্ড, দর্শক ও ভক্ত-সমর্থক ও প্রচারমাধ্যমের ভেতরে যে এ ম্যাচকে ঘিরে অন্যরকম আবেগ-উচ্ছ্বাস কাজ করছে, ক্রিকেটারদের মনে যেন সে আবেগের ঢেউ না লাগে। তাদের কাছে এটা যেন হয় অন্য আট দশটি টেস্ট ম্যাচের মতোই। তাহলে ভালো খেলা বাড়তি চাপ জন্মাবে না। সে চাপে পারফরম্যান্স খারাপও হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বাড়তি আবেগ ও ভিন্ন রকম চিন্তা করলেই পারফরম্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’নাঈমুরের সে কথা অমূলক ভাবার কারণ আছে কি? ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের ওপর বাড়তি চাপ যে পড়েছে, তা কি নতুন করে বলার অবকাশ আছে? কিপার মুশফিকুর রহীমের সাম্প্রতিক দিনকাল ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু এ ম্যাচে তাকে যত খারাপ মনে হচ্ছে, মুশফিকুর রহিম কিপার হিসেবে কি তত খারাপ? আজ তৃতীয় দিন শেষ সেশনে মুশফিক আর মিরাজের ব্যাটিংটা বাদ দিলে হায়দরাবাদে বাংলাদেশকে যত আড়ষ্ট ও অনুজ্জ্বল মনে হয়েছে, নিকট অতীতে আর কোনো ম্যাচে কি তা-ই মনে হয়েছে?অনিবার্য্য উত্তর হবে- নাহ, হয়নি। তাই বোঝাই যায়, একটু বেশিই চাপ নিয়ে ফেলেছেন মুশফিক, তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহরা। অভিষেক টেস্ট অধিনায়কের শেষ কথা, ‘সব বিভাগের সমান ভূমিকা, অবদান ও কার্যকর পারফরম্যান্স ছাড়া টেস্টে ভালো করা অসম্ভব। তবে আমার মত, ব্যাটসম্যানদের দায়দায়িত্ব বেশি। মূল কাজটা ব্যাটসম্যানদেরই সামলাতে হবে। ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার প্রথম ও শেষ কথাই হল ব্যাটিংটা ভালো করা। ব্যাটসম্যানদের ভালো করার বিকল্প নেই। অভিন্ন কন্ডিশন। আবহাওয়া ও উইকেট আমাদের মতোই। ব্যাটসম্যানদের জ্বলে ওঠার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তাদের দায়িত্ব নিয়ে খেলা জরুরি। কোনো বাড়তি চিন্তার দরকার নেই। আমরা খেলছি প্রায় অনুকূল কন্ডিশনে। লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। দীর্ঘ সময় উইকেটে টিকে থাকার ইচ্ছা, মনোযোগ-মনোসংযোগ রাখতেই হবে। অযথা ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকে সামর্থ্যের যথার্থ প্রয়োগ ঘটাতে পারলে অবশ্যই বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব।’ অভিষেক টেস্টের অধিনায়কের কথোপকথনের শেষ অংশটা মিলে গেছে মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটিংয়ে। দেখা যাক, সামনের দু’দিন ব্যাটসমানরা এ ফর্মুলার প্রয়োগ ঘটাতে পারেন কিনা?  এআরবি/এনইউ/আরআইপি

Advertisement