দিনের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট পাঁচেক পর মাঠে নামলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সঙ্গে ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল। সোজা চলে গেলেন উইকেটে। ওই সময় উইকেট পরিচর্যায় ব্যস্ত মাঠ কর্মীরা। এর মিনিট খানেক পর মাঠে নামলেন ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন। তার দেখাদেখি মাঠে নেমে গিয়ে উইকেট পরখ করতে শুরু করলেন বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালসও।বাংলাদেশ জাতীয় দলের চার বিদেশি কোচিং স্টাফ। এরাই এখন দলের অভিভাবক। হর্তা-কর্তা। টিম ম্যানেজমেন্ট বলতে এ চারজনই। কারণ ম্যানেজার নেই দলের সঙ্গে। ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে একজন এসেছেন ম্যানেজার হয়ে অপারেশনাল এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার জন্য। সুতারং নিঃসন্দেহে হায়দরাবাদ টেস্ট নিয়ে এ চারজনের জবাবদিহিতাও অনেক বেশি থাকার কথা। এ কারণেই হয়তো দিন শেষে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অ্যান্ড কোং উইকেট দেখে আসলেন, আগামীকালের পরিকল্পনা সাজানোর জন্য।ভারতীয় উইকেট সাধারণত যেমন হওয়ার কথা, এখনও তেমন হয়নি। টেস্টের তিনদিন পার হয়ে যাওয়ার পরও অশ্বিন, জাদেজারা সে অর্থে বল ঘুরাতে পারছেন না। শুধু সকালে প্রথম এক ঘণ্টায় আগুন ঝরিয়েছিলেন উমেশ যাদব আর ইশান্ত শর্মা। উমেশ যাদব তো বলতে গেলে ক্যারিয়ারের সেরা একটি স্পেল উপহার দিয়েছিলেন। দুই দিকে বলকে সুইং করালেন। রিভার্স সুইং দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন সাকিব-মুশফিকদের। সাকিব আল হাসান নিজেই জানালেন, ‘সম্ভবত আমার ক্যারিয়ারে সেরা একটি স্পেল মোকাবেলা করলাম।’সারাদিনে যে ৫টি উইকেট পড়েছে, এর মধ্যে তামিমেরটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে; রান আউট। মুমিনুল উমেশ যাদবের সেই স্পেলের শিকার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ফিরেছেন তখন ইশান্ত শর্মার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। সাকিব উইকেট দিয়েছেন স্রেফ নিজের দোষে। দিনের দ্বিতীয় সেশনের শেষ দিকে সাব্বির উইকেট দিয়েছেন জাদেজার ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে।এছাড়া হায়দরাবাদের ব্যাটিং উইকেটে ব্যাট হাতেই ভারতকে জবাব দিচ্ছে বাংলাদেশ। রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের উইকেটটি পুরোপুরি ব্যাটিংনির্ভর। এটা দেখিয়ে দিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি আর মুরালি বিজয় ও ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরিতে ৬৮৭ রানের বিশাল স্কোরের পর স্বাগতিকরা হয়তো ভেবেছিল বাংলাদেশ ভারতের রান দেখেই ভড়কে যাবে। রবীন্দ্র জাদেজা হাফ সেঞ্চুরি করার পর ব্যাট ঘুরিয়ে যেভাবে উপহাস করলেন, মনে হচ্ছে তারা ছেলেখেলা করতে নেমেছেন।কিন্তু তৃতীয় দিনের শেষ ওভারের দুই বল বাকি থাকতে ইশান্ত শর্মা মুশফিকের ভাঙা আঙুলে আবারও বলের আঘাত লাগানোর পরের বলে যেভাবে মুশফিক পুল করে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড লেগ অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকালেন, তাতে রাজীব গান্ধীর দর্শকরা বুঝে গিয়েছেন, বাংলাদেশ এখন আর ছেলেখেলা করার মতো দল নয়। টেস্টের তৃতীয় দিন পুরো তিন সেশন এবং ৯০ ওভার ব্যাট করে এখনও সদর্পে টিকে আছে বাংলাদেশ। অশ্বিন-জাদেজার ঘূর্ণিতে বাংলাদেশ উড়ে যাবে বলে যারা ভেবেছিল, তাদের মুখে চুন-কালিই মেখে দিয়েছেন সাকিব-মুশফিক-মিরাজরা।মেহেদী হাসান মিরাজ আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে নিউজিল্যান্ডে করা ৫৯৬ রানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। জানিয়ে রেখেছিলেন, আমাদের ব্যাটসম্যানদেরও সামর্থ্য আছে, বড় স্কোর গড়ার। নিজেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যাট হাতে ভালো অবদান রাখার। মেহেদী হাসান মিরাজ তার নিজের দেয়া সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন। নিজের দেয়া কথা রাখলেন মিরাজ। সাকিব-মুশফিকের ১০৭ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার পর যখন হতাশা ভর করছিল, তখন মুশফিকের সঙ্গে ৮৭ রানের জুটি গড়ে মিরাজই আশার আলো দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে। ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করে ৫১ রানে এখনও অপরাজিত রয়েছেন মিরাজ। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম অপরাজিত রয়েছেন ৮১ রানে।যদিও এখনও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে ৩৬৫ রানে। অলোঅন এড়িয়ে ভারতকে দ্বিতীয়বার ব্যাট করাকে হলে এখনও করতে হবে ১৬৫ রান। তবুও এটা নিশ্চিত বলা যায়, যারা বাংলাদেশ এক কিংবা বড় জোর দুই সেশনেই শেষ হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বুনছিলেন, তাদেরকে ব্যাট হাতে দারুণ জবাব দিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। স্পেশালি সাকিব, মুশফিক এবং মেহেদী হাসান মিরাজ।সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত ১ম ইনিংস : ৬৮৭/৬, ১৬৬ ওভার ডিক্লে. (কোহলি ২০৪, মুরালি বিজয়, ১০৮, ঋদ্ধিমান সাহা ১০৬*, পুজারা ৮৩, রাহানে ৮২, জাদেজা ৬০*, অশ্বিন ৩৪; তাইজুল ৩/১৫৬, মিরাজ ২/১৬৫, তাসকিন ১/১২৭)।বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩২২/৬, ১০৪ ওভার (সাকিব ৮২, মুশফিক ৮১*, মিরাজ ৫১*, মাহমুদউল্লাহ ২৮, তামিম ২৪, সৌম্য ১৫, সাব্বির ১৬; উমেশ যাদব ২/৭২, জাদেজা ১/৬০, ইশান্ত শর্মা ১/৫৪)। আইএইচএস/এনইউ/জেআইএম
Advertisement