সেই চিরাচরিত দৃশ্য। ভালো খেলতে খেলতে দিনের শেষ মুহূর্তে এসে উইকেট হারানোর বেদনায় পুড়তে থাকা। অবশেষে হতাশার এক কালো অধ্যায় সৃষ্টি করে ম্যাচে পরাজয়। গত কয়েকটি টেস্টে এমন দৃশ্যই যেন নিয়মিত। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামেও এর ব্যতিক্রম হলো না। দিনের খেলা শেষ হওয়ার ২ ওভার আগে ভালো ব্যাটিং করতে করতে হঠাৎ খেই হারালেন বাংলাদেশের ওপেনার সৌম্য সরকার। প্রান্ত বদল করে বল করতে আসা উমেশ যাদবের হালকা ইনসুইং বলে ব্যাটের কানা লাগিয়ে উইকেট দিলেন পেছনে, উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার হাতে।সারাদিন এমনিতেই হতাশার কেটেছে বাংলাদেশের। তার ওপর শেষ মুহূর্তের এই উইকেট হারানোটা পুরোপুরিই হতাশার। বাংলাদেশ এমনিতেই ব্যাকফুটে। আরও ব্যাকফুটে চলে গেলো সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে। দিন শেষে বাংলাদেশের রান ১ উইকেট হারিয়ে ৪০। এখনও ভারতের চেয়ে পিছিয়ে ৬৪৭ রানে। তামিম ২৪ এবং মুমিনুল রয়েছেন ১ রানে। এখনও বহু দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে মুশফিকুর রহীম অ্যান্ড কোংকে। এ কঠিন পথটি পাড়ি দেয়ার জন্য ব্যাটসম্যানদেরেই আসল দায়িত্বটা পালন করতে হবে। এছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের সামনে বোলাররা পুরোপুরি ব্যর্থ। ফিল্ডাররা সেই ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে ছেড়েছেন। রানের পাহাড় গড়েছে ভারত। ৬৮৭ রানের বিশাল রানের নিচে চাপা পড়ে দিনের আর ১৪ ওভার বাকি থাকতেই নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছে বাংলাদেশ। বিরাট কোহলির ডাবল সেঞ্চুরির পর ঋদ্ধিমান সাহার সেঞ্চুরির জন্যই অপেক্ষা করছিল ভারত। তার আগেই হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ঋদ্ধিমানের সেঞ্চুরি হওয়ার একটু পরই ইনিংস ঘোষণা করলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি।ব্যাট করতে নেমে ভালোই সূচনা করলেন সৌম্য আর তামিম। ভুবনেশ্বর কুমার আর ইশান্ত শর্মাকে দেখে-শুনে ভালোভাবেই খেলছিলেন তারা দু’জন। দিনের চার ওভার বাকি থাকতেই আক্রমণে নিয়ে আসা হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। প্রান্ত বদল করে ইশান্ত শর্মার জায়গায় নিয়ে আসা হলো উমেশ যাদবকে। তার বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন সৌম্য। যদিও প্রথমে আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে জিতে গেলেন বিরাট কোহলি। সৌম্য আউট হওয়ার পর দিনের বাদি দুই ওভার তামিম আর মুমিনুলই ভালোভাবে কাটিয়ে দিলেন। তৃতীয় দিন সকাল থেকে শুরু হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আসল পরীক্ষা। সকাল সকাল উইকেট থেকে পেসাররা কিছুটা সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। প্রথম ঘণ্টা খানেক পেসারদের সামলানোর পর শুরু হবে দু’দিক থেক স্পিনারদের আক্রমণ। কিংবা শুরু থেকেই হয়তো স্পিনারের হাতে বল তুলে দিতে পারেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় দিনই যেভাবে উইকেট ভাঙতে শুরু করেছে কিংবা ধুলা জমতে শুরু করেছে, তাতেই দুঃশ্চিন্তা শুধু বাড়ছে। অশ্বিনের জন্য আদর্শ উইকেট। তার ঘূর্ণি কতটুকু সামলাতে পারবেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা; সেটাই দেখার বিষয়।দ্বিতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা বাংলাদেশের ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজের বেশ আস্থা রয়েছে ব্যাটসম্যানদের ওপর। তার বিশ্বাস, বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য আছে বড় ইনিংস খেলার। নিজে বোলিং করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মিরাজ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস- আমাদের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারবেন। বিশেষ করে তামিম ভাই উইকেটে আছেন। মুশফিক ভাই, সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাইরা আছেন। এ উইকেটে তারাও ভালো ব্যাটিং করতে পারবেন। ওনারা যদি ভালো ব্যাটিং করতে পারেন, তাহলে আমার বিশ্বাস- দলও একটা ভালো অবস্থানে যেতে পারবে।’প্রথম দিনই কোহলিরা জানান দিয়েছিলেন বড় স্কোর গড়তে যাচ্ছেন তারা। নিজে ছিলেন ১১১ রানে অপরাজিত। আজিঙ্কা রাহানে ছিলেন ৪৫ রানে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই যে তারা দ্রুত রান তুলবে তাতে সন্দেহ ছিল না। তার প্রমাণ মিললো প্রথম ১ ঘন্টায়; কোহলি আর রাহানে মিলে ১৪ ওভারে তুলে ফেললেন ৭০ রান। রান তোলার গড় ৫ করে। পরের ঘণ্টায় কিছুটা রান বাঁধতে পেরেছিল বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগে পরের ১৫ ওভারে রান উঠেছে ৫১টি। সব মিলিয়ে প্রথম সেশনের ৩১ ওভারে উঠলো ১২১ রান।এরই মধ্যে ক্যাচ মিস করলেন দলের সেরা ফিল্ডার খ্যাত সাব্বির রহমান। রাহানের ক্যাচটা যখন মিস করলেন, তখন তিনি ছিলেন ৬২ রানে। শেষ পর্যন্ত আরও ২০ রান যোগ করে মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। জুটিটা গড়েন ২২২ রানের।রাহানে আউট হওয়ার পর মাঠে নামলেন ঋদ্ধিমান সাহা। একটু পরই; খেলার ১১৭তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বিরাট কোহলিকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। ওই সময় তিনি ছিলেন ১৮০ রানে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে এলো ২০৪ রানের ঝকঝকে ইনিংস। কোহলির রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পরের ওভারেই ৪ রানে থাকা ঋদ্ধিমান সাহার নিশ্চিত স্ট্যাম্পিং মিস করলেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ঋদ্ধি অপরাজিত থাকলেন ১০৬ রানে। ৭০ রানের মাথায়ও নিশ্চিত এলবির হাত থেকে রিভিউর কল্যাণে বেঁচে গেলেন ভারতের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।রবীন্দ্র জাদেজার একটি ক্যাচ মিস করলেন তামিম ইকবাল। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন জাদেজা। মিড অফে দাঁড়িয়ে সেই ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যার্থ হলেন তামিম ইকবাল। সারা দিনে এমনই অসংখ্য সুযোগ মিসের মহড়া দিয়ে ভারতের রানকে ৬ উইকেটে ৬৮৭-তে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের ফিল্ডারদেরও অবদান কম নয়। প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার দর্শকের সামনে রান বন্যা উপহার দিয়ে ইনিংস ঘোষণা করার পর ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয়- ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা কিংবা উমেশ যাদবদের সামনে কতটা ধৈর্য্য ধরে ব্যাট করতে পারে বাংলাদেশ। আইএইচএস/এনইউ/পিআর
Advertisement