মতামত

প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় ইমাম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশকিছু কথা বলেছেন যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করে আলেমদের প্রতি আহ্বান রাখেন ধর্মীয় উগ্রবাদ বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য। তিনি বলেন, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ইসলাম যে জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না- এই বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে মানুষকে বোঝাবেন। কারণ আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, মানুষ নেবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদ থেকে শিশু ও যুব সমাজকে রক্ষায় ইমাম ও আলেমদের দায়িত্বের কথাও শেখ হাসিনা মনে করিয়ে দেন। আপনারা মানুষকে ঠিকমত বোঝালে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চিরতরে দূর করতে পারব। আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাতে চাই, বাংলাদেশই পারবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সত্যিকার ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং সংঘাতের বিস্তারের প্রেক্ষাপটে অস্ত্র বিক্রেতা দেশগুলোর দিকে আঙুল তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইমাম সম্মেলনে তিনি বলেছেন, যেসব দেশ মুসলিম অধ্যুষিত, সেখানেই মারামারি, কাটাকাটি, সেখানেই বোমাবাজি, খুনখারাবি হচ্ছে। সেখানেই অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু, এই অস্ত্রটা তৈরি করে কারা? আর লাভবান কারা হয়? রণক্ষেত্র বানাচ্ছে আমাদের মুসলমানদের জায়গাগুলো। রক্ত যাচ্ছে মুসলমানদের। আর ওই অস্ত্র তৈরি করে আর বিক্রি করে কারা লাভবান হচ্ছে? সেটা আপনারা একটু চিন্তা করে দেখবেন। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র। এদেশে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার সমান। দুঃখজনক হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে কখনো কখনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। ধর্মকে সামনে নিয়ে এসে অসাধু চক্র নানা ফায়দা লুটে। এছাড়া ধর্মের নামে চরমপন্থা তথা জঙ্গিবাদের উত্থানও ভাবিয়ে তুলছে। এই অপতৎপরতা বন্ধে ইমামদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ ধর্মের দোহাই দিয়ে এসব চললেও ইসলাম ধর্ম কোনো অবস্থায়ই অশান্তি, অন্যের জীবন কেড়ে নেয়া কিংবা আত্মঘাতী হওয়া-ইত্যাদি সমর্থন করে না। আর এই বিষয়টি যারা ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা যদি বুঝিয়ে বলেন সেটি মানুষের মধ্যে বেশি প্রভাব ফেলবে। প্রশাসনিক ব্যবস্থার চেয়েও এটি কাজ দেবে বেশি। আর মুসলিম বিশ্বে আজ যে অস্ত্রের ঝনঝনানি, রক্তারক্তি, ভ্রাতৃহত্যা চলছে সেটির ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বকেও উপলব্ধি করতে হবে যে তারা ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা। সার্বিকভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা বন্ধে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুসলিম বিশ্বে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জটিল-কূটিল রাজনৈতিক হিসাব থেকে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিজেদের রক্ষা করতে হবে।এইচআর/এমএস

Advertisement