খেলাধুলা

‘টিম ম্যানেজমেন্ট অভিষেক টেস্টে বুলবুল ভাইকে খেলাতে চায়নি’

ক্রিকেট মক্কা লর্ডসের মিউজিয়ামে বাংলাদেশের এক ক্রিকেটারের ব্যাট সংরক্ষিত আছে। তিনি কে? ঐ ব্যাটের মাহাত্মই বা কি? খুব ধাঁধায় পড়ে যাওয়ার মতো প্রশ্ন? ভাবছেন বাংলাদেশ ও ভারতের টেস্ট চলাকালীন কোনো অবান্তর বিষয়ের অবতারণা বুঝি। নাহ, তা নয় মোটেই। আজ থেকে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির দল ও মুশফিক বাহিনীর মধ্যে যে এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হয়ছে, তার সঙ্গে ওপরে যার এবং যে ব্যাটের কথা বলা হলো তা প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ সংশ্রব ঠিকই আছে। ক্রিকেটারটির নাম আমিনুল ইসলাম বুলবুল। যিনি টেস্ট অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে শতরান করে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুুরিয়ান হিসেবে নিজের নামকে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছেন। ২০০০ সালে ১১ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে যে ব্যাট দিয়ে আমিনুল ইসলাম ঐতিহাসিক শতরান করে বিশ্ব ক্রিকেটে এক নতুন রেকর্ড স্রষ্টা হয়েছিলেন, ইংল্যান্ড তথা ক্রিকেট তীর্থ লর্ডস মিউজিয়াম সেই ব্যাটকে সংরক্ষণ করেছে। আমিনুলের ঐ ব্যাটের জায়গা হয়েছে লর্ডস মিউজিয়ামে। একটা দেশের টেস্ট যাত্রার শুরুতে ব্যাট হাতে নেমেই শতরান- অনেক বড় কৃতিত্ব। টেস্ট ক্রিকেটে আছে মাত্র ৩ জনের। অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান, জিম্বাবুয়ের ডেভ হাউটন ও বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এ তিন ব্যাটসম্যান তার নিজ নিজ দেশের অভিষেক টেস্টে শতরানের দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী। এর মধ্যে রান তোলায় আমিনুল দ্বিতীয়। দেশের অভিষেক টেস্টে নিজে ব্যাট হাতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে সবচেয়ে বেশি ১৫৫ রানের ইনিংসটি এখনো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান চার্লস ব্যানারম্যানের। আর দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৪৫ রান আমিনুল ইমলামের। জিম্বাবুয়ের ডেভ হাটনের সংগ্রহ ১২১।আমিনুল তাদের কাতারে জায়গা করে নিয়েছেন। তার অসামান্য কীর্তিকে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতেই আসলে লর্ডস জাদুঘরে তার সে সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাট রাখা হয়েছে। কিন্তু জানেন, যিনি অমন অসামান্য কৃতিত্বের জন্য আজ ইতিহাস হয়ে গেছেন, সেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অভিষেক টেস্ট খেলারই কথা ছিল না। টিম ম্যানেজমেন্ট চায়নি আমিনুল ইসলাম দেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলুক। বুধবার জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে ঐ তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রমম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়।  জাগো নিউজের সাথে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন জানান- প্রথম টেস্টের আগের রাতে তার তেমন ভাল ঘুম হয়নি। নাইমুরের ভাষায়, ‘রাত পোহালেই টেস্ট দল হিসেবে অভিষেক। সেই দলের অধিনায়ক আমি। ডর-ভয় না থাকলেও আবেগ ছিল যথেষ্ঠই। আবেগের পাশাপাশি স্নায়ুবিক উত্তেজনায়ও ভুগেছি। সে কারণেই হয়তো ঘুম কম হয়েছে। এখনো মনে আছে ঢাকার শেরাটন হোটেলে খেলার আগের রাতে আমার মাসহ পরিারের সদস্যরা দেখা করতে ও শুভ কামনা জানাতে এসেছিলেন। তারা চলে যাওয়ার পর ডিনার করে ঘুমাতে যাওয়া। কিন্তু অন্য রাতের তুলনায় ঘুম কমই হয়েছিল।’ সেটা কি টেনশনে? নাঈমুরের নির্লিপ্ত জবাব, ‘নাহ। অভিষেক টেস্টের আগে সে অর্থে আমার কোনো চাপ ছিল না। মনে হয় একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। তাই হয়তো চাপ ও টেনশন গ্রাস করতে পারেনি।’ তবে ঘুম কম হওয়ার একটা অন্তর্নিহিত কারণ আছে। টেস্ট শুরুর আগে  হোটেলে টিম মিটিংয়ে নানা বিষয়ে হৈচৈ ও তর্ক হয়েছিল। একাদশ সাজানো নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ছিল বড় ধরনের অমিল। এক পক্ষ সিনিয়র ব্যাটসম্যান আমিনুল ইমলাম বুলবুলকে খেলানোর বিরোধিতা করেছি। আর অধিনায়ক নাঈমুর চাইছিলেন যে করেই হোক আমিনুলকে খেলাতে। অভিষেক টেস্ট অধিনায়ক সেদিন রাতের ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে, ‘বুলবুল ভাই (আমিুল ইসলাম ও সুমনকে (হাবিবুল বাশার) খেলানো নিয়ে মতপার্থক্য হয়েছিল। রাত পোহালে টেস্ট অভিষেক, সারা জাতি উন্মুখ অপেক্ষায়। পুরো ক্রিকেট বিশ্ব তাকিয়ে আছে। আমরা কোথায় টিম মিটিংয়ে লক্ষ্য পরিকল্পনা স্থির করব। টার্গেট সেট করা হবে। প্ল্যান ‘এ’ , প্ল্যান ‘বি’ ও প্ল্যান ‘সি’ ঠিক করা হবে। পরে পরিবেশ- পরিস্থিতি বুঝে যে কোনো একটার প্রয়োগ ঘটাবো। কিন্তু হায়! এমন আলাপ আলোচনার বদলে দল নির্বাচন নিয়ে রীতিমতো ঝামেলা পাকিয়ে গেল। বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম ) ও সুমনকে (হাবিবুল বাশার) খেলানো নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে মতপার্থক্য তৈরি হলো। সত্যি বলতে কি টিম ম্যানেজমেন্ট কিঝুতেই চায়নি বুলবুল ভাই খেলুক।  বুলবুল ভাইকে খেলানো নিয়ে অনেক বাক্য ব্যয় করতে হয়েছে আমার। তবে সুমনের বিষয়ে অবশ্য কোচ এ ডি বার্লোর ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। আমি তাদের খেলানোর পক্ষে অনঢ় ও অনমনীয় থাকলাম। যে করেই হোক বুলবুল ভাই ও সুমনকে খেলাতেই হবে- আমি এমনই বললাম। পরিষ্কার বলে দিলাম, আমরা এ টেস্ট জিতবো না। এমন কিছু আহামরি ফলও হয়তো হবে না। তাই আমি চাই যারা সিনিয়র আছেন তারা যেন খেলতে পারেন। বুলবুল ভাই এবং সুমনকে খেলানোর পক্ষে আমার যুক্তি ছিল এমন, ‘এটা আমাদের প্রথম টেস্ট। আমরা খেলতে নেমেই যে আহামরি কিছু করে ফেলব- এমন নয়। তবে আমি চাই অভিজ্ঞ ও সিনিয়ররা খেলুক। এখানে কজন সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, আমি বিশ্বাস করতাম, এখনো করি- যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্তরণে কার্যকর অবদান রেখেছেন। এ দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ও প্রচার প্রসারেও তাদের আছে বড় ভূমিকা। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, বুলবুল ভাই মাঠে সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন। টেস্টে প্রথম ব্যাট হাতে নেমেই সেঞ্চুুরি হাঁকিয়েছেন। বাশারও প্রথম হাফ সেঞ্চুুরি করে নিজেকে মেলে ধরেছে। এটা আধিনায়ক হিসেবে আমার যে কত বড় বিজয় ও মানসিক প্রশান্তি; বলে বোঝাতে পারবো না।’ এনইউ/পিআর

Advertisement