আন্তর্জাতিক

মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা ট্রাম্পের

মিসরের রাজনৈতিক সংগঠন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’কে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। ১৯২৮ সালে গঠিত এই সংগঠনটির লাখ লাখ অনুসারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকলেও হোয়াইট হাউস মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’র তালিকায় যোগ করার কথা ভাবছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কিছু আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক ইতিমধ্যে ঘোলাটে হয়েছে। মিসরের এই রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এছাড়া ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন ইসলামবিরোধী হিসেবেও পরিচিত পেতে পারে। ৮৯ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত মিসরের ইসমালিয়া শহরে মুসলিম ব্রাদারহুডের জন্ম। সংগঠনটির জন্মের পর থেকেই দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। মিসরের এই সংগঠনেকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এর অাগে বেইব্রার্ট নিউজ ওয়েবসাইটের সাবেক প্রধান ও হোয়াইট হাউসের বর্তমান মুখ্য পরিকল্পনাকারী স্টিভ ব্যান, মিসরের এই সংগঠনকে ‘আধুনিক সন্ত্রাসবাদের ভিত্তি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সিন স্পাইসারকে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধের পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। এছাড়া ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা অস্বীকারও করেননি তিনি।যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পরিকল্পনা পরিচালক সেবাস্টিয়ান গোরকা ও নিরাপত্তা নীতি কেন্দ্রের সভাপতি ফ্রাঙ্ক জেফানি সন্ত্রাসী তালিকায় ব্রাদারহুডকে অন্তর্ভূক্তের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য মিসরীয় এই সংগঠন হুমকি বলে চিহ্নিত করেছেন তারা। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষক ও বিশ্লেষক উেইলিয়াস এম সি কান্ট ও বেঞ্জামিন উইটস বলছেন, ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের।  ইসলামী রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত মুসলিম ব্রাদারহুড ১৯৭০ সালে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। পরে দেশটির ক্ষমতায় আরোহন করে এই সংগঠনটি। ২০১১ সালে তিউনিশিয়ায় শুরু হওয়া আরব বসন্তের ধাক্কা লাগে মিসরেও। এ সময় ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে দেশটির প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। মিসরের এই সংগঠনের ভাবাদর্শের সঙ্গে মিল রয়েছে তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টির। ব্রাদারহুডের নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে তুরস্কের এই রাজনৈতিক দলের। এছাড়া মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর লিবিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয় ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক রাজনীতিক। এদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধে মার্কিন পরিকল্পনার বিরোধীতা মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে দেখা যেতে পারে বলে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন। ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়ায় সৌদি আরবের কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। প্রায় অর্ধ-শতাব্দী ধরে মুসলিম ব্রাদারহুডকে আর্থিক সহায়তা করে এলেও ২০১৪ সালে সৌদি আরব মিসরের এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে। কিন্তু সম্প্রতি ব্রাদারহুডের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সৌদি কর্মকর্তারা এই সংগঠনটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে হোয়াইট হাউস আখ্যা দিলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার, তুরস্ক ও তিউনিশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এসআইএস/পিআর

Advertisement