ফিচার

পানিতে ভাসমান গ্রাম

ছবি দেখে ভুল হতেই পারে, মনে হতে পারে বাংলাদেশেরই কোনো গ্রাম বুঝি। যারা রায়েরবাজার গেছেন, অথবা মেরুল বাড্ডার কোনো খালের ওপর বাঁশ দিয়ে বাঁধা সার সার ঘরের মানব-বসতি দেখেছেন, তাদের কাছে খুব নতুন মনে হবে না প্রথম দর্শনে। কিন্তু পার্থক্য আছেই। এ এক এমন জায়গা যেখানকার বাসিন্দারা ডাঙায় পা-ই দেন না। গ্রামের নাম সান্তাদু, চিনের নিঙদে শহর থেকে ৩০ কিমি দূরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের এই গ্রামটা জাপানি বোমার আঘাতে একেবারে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছিল গ্রাম। কিন্তু জীবন ভারী অদ্ভুত, সৃষ্টিও ভারী অবাক করা। ধ্বংসের মধ্যেও তৈরি হলো আশ্চর্য এক গ্রাম। যা শুধু ভেসে থাকে জলের ওপর। বাঁশ, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক দিয়ে  নতুন গ্রাম গড়লেন বাসিন্দারা। গ্রামে কাঠের তৈরি অনেক বাড়ি আছে, রেস্তোরাঁ আছে, একটা থানাও আছে। কিন্তু সবগুলোই শুধু ভেসে থাকে। কাঠের বাড়িগুলোর মধ্যে এমনভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে যে ভেসে থাকাটা সহজ হয়। মাছ ধরাই গ্রামের বাসিন্দাদের মূল জীবিকা । প্রকৃতিও একেবারে ঢেলে দিয়েছে এই গ্রামকে। চিংড়ি, কুচো চিংড়ি, গলদা চিংড়ি থেকে শুরু করে নানা ধরনের মাছ আছে এই গ্রামের জলের তলায়। এখান থেকেই পাওয়া যায় চিনের সেরা `সি ফুড`। মনের আনন্দে এখানকার বাসিন্দারা  দিনভর মাছ ধরে বেড়ান। আর রাতে ভাসমান গ্রামে চলে উৎসব। তখন দূর থেকে ভারী অদ্ভুত দেখায় এই গ্রামকে। মনে হয় যেন প্রতিকূলতাকে অন্ধকারে রেখে আলোয় ভেসে চলছে উৎসব। প্রকৃতির রোষানলে মানুষকে পড়তে হয় মাঝেমধ্যেই।  তবু  তার মোকাবিলা করেই বেঁচে থাকে মানুষ। যেমন বেঁচে আছে সান্তাদু গ্রাম। বেঁচে আছে ভেসে থেকেই। আর আছে বেঁচে জন্য কিছু মানুষের প্রাণপণ লড়াই । এসআরজে

Advertisement