ফিচার

ক্যান্সার আক্রান্ত বোনকে ‘আপা, কাঠবাদাম খাবি’?

‘আপা, কাঠবাদাম খাবি’? রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর শিখা চিরন্তনের অদূরে একটি গাছের তলায় হুইল চেয়ারে বসেছিল আনুমানিক ২৬-২৭ বছর বয়সী এক পঙ্গু তরুণী। পাশে দাঁড়িয়ে ১৫-১৬ বছর বয়সী এক তরুণ এ কথা জিজ্ঞাসা করে। তরুণ-তরুণী সম্পর্কে ভাই-বোন। মৃদু হেসে তরুণী পাল্টা প্রশ্ন করে কোথায় পাবি? এ সময় ছোট ভাইটি দৌড়ে গিয়ে দুটি গাছের ডাল খুঁজে আনে। দুই ভাইবোন মিলে খুঁজতে থাকে কাঠবাদাম। শীতকাল বিদায় নিচ্ছে। আসি আসি করছে বসন্তকাল। বর্তমানে উদ্যানের গাছের পাতা ঝরে পড়ছে। সেই ঝরা পাতা সরিয়ে দুই ভাইবোন কাঠবাদাম কুড়াতে লাগলো। হুইল চেয়ার ঠেলে এই তরুণীর লাঠি দিয়ে কিছু একটা খোঁজার দৃশ্য উপস্থিত সবার দৃষ্টি কাড়ে। বৃহস্পতিবার সকালে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের চোখেও এ দৃশ্য ধরা পড়ে। তরুণীর হুইল চেয়ার অনেক পুরনো। পোশাক-আশাকও অতি সাধারণ। চেহারায় ভীষণ ক্লান্তি ও বিষাদের ছাপ। কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক তার নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তরুণী জানান তার নাম মৌরিণ। বিক্রমপুরের লৌহজং থানার মশদগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তিনি। দুই ভাই আর দুই বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। বাসা কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই আনমনা হয়ে পড়েন তরুণী। কয়েক সেকেন্ড পর জানান, বাসা নেই। গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই তার নিত্যদিন কাটছে। স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা নিয়ে প্রথমে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে ডায়াবেটিস ও কিডনিসহ বিভিন্ন রোগ ধরা পড়ে। হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে এক সময় বেড সোর (পিঠে গভীর ক্ষত) সৃষ্টি হয়। সুস্থ হওয়ার আশায় হাসপাতালে তিন বছর কাটালেও সুস্থ তো হননি উল্টো গত ডিসেম্বরে তার ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও সামান্য কিডনি সমস্যার কারণে মৌরিণকে চিকিৎসকরা কোনো ওয়ার্ডে ভর্তি রাখেননি। তাকে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করে ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করতে বলেছেন।মৌরিণ জানান, তার পক্ষে বাড়ি থেকে এসে চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই ঢামেক হাসপাতাল ২-এর ৯ তলার বারান্দা থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত তিন বছর ধরে হাসপাতালে থাকায় ডাক্তারসহ অন্য অনেকেই তাকে চেনেন। তাদেরসহ অন্য অনেকের সাহায্যে চিকিৎসা চলছে। মৌরিণ জানান, গত দুদিন ধরে ছোট ভাই হুইল চেয়ারে বসিয়ে উদ্যানে হাঁটাতে নিয়ে আসে। ছোট ভাইটি কাঠবাদাম গাছ খুঁজে বের করেছে। কাঠবাদাম খেতে ভালোই লাগে তার।মৌরিণ জানান, ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি সাভার সিআরপিতে কুটির শিল্পের শিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলা থেকে স্পাইনাল কর্ডের সমস্যাজনিত কারণে হাঁটাচলা করতে পারতেন না। হাতের কাজ শেখা থাকায় সিআরপিতে চাকরি হয়। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিন বছর আগে চাকরি ছেড়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর থেকে কখনও ভর্তি থেকে আবার কখনও ভর্তি না থেকেই হাসপাতালে দিন কাটছে তার। এমইউ/জেডএ/জেআইএম

Advertisement