বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচের চাষে ভাগ্য ফিরেছে জেলার নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের শতশত দরিদ্র পরিবারের। আর এখানকার বোম্বাই মরিচ পূরণ করছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বোম্বাই মরিচের চাহিদা।বোম্বাই মরিচ চাষীরা জমিতে মাটি কেটে আইল বেঁধে ক্ষেত তৈরি করে বোম্বাই মরিচের চাষ করে। এছাড়াও তারা নার্সারী ক্ষেতে এবং পেয়ারা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় জমিতে বোম্বাই মরিচ চাষ করে প্রতি বছরই উপার্জন করছে প্রচুর অর্থ।বোম্বাই মরিচ চাষীদের মধ্যে একজন হলেন আদাবাড়ী গ্রামে যুবক রিপন হাওলাদার। যিনি প্রথমে দিনমজুরের কাজ করতেন। সে কুড়িয়ানা বাজারের ব্যবসায়ী অমলের পরামর্শে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ২০০৫ সালে এক বিঘা জমি লীজ নিয়ে শুরু করে বোম্বাই মরিচ চাষ। এখান থেকে প্রথম বছরেই তিনি লাভ করেন প্রায় ২০ হাজার টাকা। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।রিপন এখন ওই গ্রামের স্বচ্ছলদের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তিনি কয়েক লক্ষ টাকার মালিক। প্রতি বছরই বাড়ছে তার ক্ষেতের পরিধি। এ বছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে বোম্বাই মরিচের চাষ করেছেন।কুড়িয়ানা-রায়েরহাট সড়কের বঙ্কুরা এলাকার রাস্তার দুই ধারে রিপনের বোম্বাই মরিচের বাগান পথচারীদের মন কাড়ে। রিপন জানান, কার্তিক প্রথম দিকে হয় বোম্বাই মরিচ চাষের কার্যক্রম। এক বিঘা জমিতে রোপন করা হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার চারা। গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ফাল্গুন মাসের প্রথম দিকে শুরু হয় মরিচ তোলার কাজ। ওই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর মরিচ তুলে বাজার জাত করা হয়। মরিচ সংগ্রহ করে মরিচ বাজারগুলোতে নেওয়া হয়।সেখানে তারা পাইকারি ক্রেতাদের কাছে প্রতি হাজার মরিচ বিক্রি করে ৩০০/৪০০ টাকায়। সেখান থেকে তারা সেগুলো ঝুড়ি বোঝাই করে মিনি ট্রাকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে চালান করেন। কারওয়ান বাজারের সিংহভাগ বোম্বাই মরিচ স্বরূপকাঠি থেকে নেওয়া হয়। প্রতিদিন ৮/১০টি মিনি ট্রাক মরিচ নিয়ে যায় ঢাকায়। এর পাশাপাশি স্বরূপকাঠি ও বরিশাল থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে করেও মরিচ ঢাকায় পাঠানো হয়।মরিচের পাশাপাশি রিপন তার ক্ষেতে পুঁই শাকের চাষ করেন যা থেকে তিনি অনেক টাকা উপার্জন করেন। কোন প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে প্রতি বিঘার মরিচ ও পুঁই শাক বিক্রি করে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর ১০ বিঘা জমি থেকে রিপন ৮ থেকে ৯ লাখ টাকার মরিচ ও পুঁই শাক বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছে।বোম্বাই মরিচ চাষীদের মধ্যে একজন হলেন আদাবাড়ী গ্রামে অসিম হাওলাদার জানান, ওই এলাকার অনেক ক্ষেতে মরিচ গাছের গোড়া পঁচা রোগ দেখা দেয়ায় অনেক কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। কীটনাশক বিক্রেতা ও অন্যান্য কৃষকদের সাথে পরামর্শ করে কীটনাশক দেওয়া হলেও কোন কাজ হচ্ছে না। চাষীদের অভিযোগ স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের সমস্যা সমাধানে তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শহীদুল্লাহের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বোম্বাই মরিচ গাছগুলো ডাইব্যাক নামক ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। বাজারে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক নাশক পাওয়া যায় তা পরিমাণ মত ব্যবহার করলে এ রোগ কমে যাবে। কৃষি বিভাগের উদাসীনতার ব্যাপারে তিনি এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাননি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।এমজেড/আরআই
Advertisement