হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগ। নেতাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের। রুম দখল, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিরোধী ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ঢাবির নবগঠিত হল কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে। তবে দুটি ঘটনায় সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হলেও নীরব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে জিয়াউর রহমান হলে স্ট্যাম্প দিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের বিরুদ্ধে। এতে চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।২ ফেব্রুয়ারি রাতে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ায় কবি জসীমউদদীন হলের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে অপারেশনের জায়গায় লাথি মারে। একই দিন দুপুরে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে অংশ নেয়ার জেরে ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রাজীব কুমার দাশকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এর আগে ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে জাতীয় কমিটির ডাকা হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে রাজীব দাশসহ আন্দোলনরত কর্মীরা চারুকলার ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে ছাত্রলীগ বাধা দেয়। এ সময় ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের বাগবিতণ্ডা হয়।এছাড়া ২ ফেব্রুয়ারি রাতে জগন্নাথ হলে বাণী অর্চনা উদযাপনকালে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বিশ্বাসের অনুসারীদের হাতে মারধরের শিকার হন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় চারজনকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।এদিকে কমিটি ঘোষণার পর রুম দখল নিয়ে বেশ কয়েকটি হলে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কমিটি গঠনের আগেও এমন অভিযোগ ছিল। মাস্টারদা সূর্যসেন হলের সভাপতি গোলাম সারওয়ার হল কমিটি গঠনের আগে ৯টি কক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে নিজ অনুসারীদের ওইসব রুমে তুলে দেন।এছাড়া শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক, কবি জসিমউদদীন, সলিমুল্লাহ মুসলিম, স্যার এ এফ রহমান, শহীদুল্লাহ হলে রুম দখল নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।১৭ জানুয়ারি কবি জসিমউদদীন হল ও শহীদুল্লাহ হলে ব্রডব্যান্ড সরবারহকারী প্রতিষ্ঠান কেএস নেটওয়ার্ক সংযোগ বন্ধ করে দেয়। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন না দিলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে ছাত্রলীগ নেতারা নির্দেশ দেন। এরই জেরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে গত বছরের শুরুতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেও এমন ঘটনা ঘটে।১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে শহীদুল্লাহ হলের আতাউর রহমান খান খাদিম ভবনে রুম দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি সাকিব হাসান ও সেক্রেটারি আরিফ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন।গত ৫ ও ৬ জানুয়ারি দুই দফায় হল থেকে নিজ দলের কয়েকজন নেতাকে বের করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানের বিরুদ্ধে। ৩ জানুয়ারি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রুম দখল নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ২ জানুয়ারি সোমবার বিজয় একাত্তর হলে গ্রুপ পরিবর্তন করতে চাওয়ায় পদ্মা ১০০০১ নম্বর রুমে এক কর্মীকে মারধর করে সভাপতি ফকির রাসেলের অনুসারীরা। এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স বলেন, সাংগঠনিকভাবে কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এসব ঘটনা ঘটছে। সামনে যেন না ঘটে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আবিদ আল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না। অপরাধী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, অন্যায় করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, তা অভ্যন্তরীণ কোন্দল নয়, নিজেদের মধ্যে কয়েকজন অপরাধ করছে। তাই আমরা বিচারও করেছি। এমএইচ/জেএইচ/এএইচ/এমএস
Advertisement