বিসিএলের ম্যাচ খেলার জন্য গিয়েছিলেন সিলেট। মোস্তাফিজ-রুবেলের তোপ, রাজ্জাকের ঘূর্ণির সামনে চারদিনের ম্যাচ তিনদিনেই জিতে গিয়েছিল দক্ষিণাঞ্চল। যে দলের হয়ে খেলছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। একদিন হাতে রেখে ম্যাচ জেতার কারণে ফুরফুরে মেজাজেই ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের ক্রিকোররা। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের কাছে হঠাৎই সোমবার বিকেলে ফোন এলো বিসিবির কাছ থেকে, ‘দ্রুত ঢাকায় আসো। কাল (মঙ্গলবার) সকালেই হায়দরাবাদ যেতে হবে তোমাকে।’ ফোন পেয়েই দ্রুত ঢাকা আসার জন্য বিমান টিকিট খোঁজ করলেন সৈকত। পেলেন না। বাসে করেই সোমবার রাতে এসে পৌঁছালেন ময়মনসিংহ, নিজের বাড়িতে।মঙ্গলবার কাক ডাকা ভোরে রওনা দিলেন ঢাকায়। বিসিবিতে এসে বিমানের টিকিটটা নিয়েই সোজা বিমানবন্দর। সাড়ে ১১টায় কলকাতাগামী ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে উঠলেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইটে করে হায়দরাবাদ পৌঁছালেন ভারত সময় বিকেল সাড়ে ৫টায়।চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তির চাপ। আগের রাতে ঠিকভাবে ঘুমে যেতে না পারার কারণে প্রভাবটা চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছিল; কিন্তু এটা শুধুই একটা পরিস্থিতি। সৈকতের চোখ-মুখে ওই চাপের আড়ালে যে খুশির ঝিলিক দেখা যাচ্ছিল, সেটার ভাষাও ভিন্ন। ইমরুল কায়েসের ইনজুরির কারণে হয়তো, ভারতের বিপক্ষেই সাদা জার্সিতে অভিষেকটা হয়েও যেতে পারে তার। এমন একটা সম্ভাবনা যখন তৈরি হয়েছে, তখন খুশির ঝিলিক তার চেহারায় না খেলে যেতেই পারে না।ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরমার। গত বছরই তো এক মৌসুমে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ সম্ভাবনাময়ী এক ব্যাটসম্যান। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেটেও নিজের প্রতিভার সাক্ষর রাখতে পেরেছেন; কিন্তু নিজের প্রিয় ফরম্যাট টেস্টেই কেন যেন দরজাটা খুলছে না তার সামনে। সৈকত নিজেও মনে করেন টেস্ট খেলতে পারলেই তার ভালো লাগতো। তবে, সব পরিস্থিতিকে মেনে নিয়েছেন। ক্যারিয়ার তো মাত্র শুরু হলো! টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা নির্বাচকরা যা ভালো মনে করছেন, সেটাই করবে। এ জন্য তিনি ধৈর্য ধরতে রাজি।হায়দরাবাদ আসার পথে বিমানেই জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সৈকত বলেন, ‘টেস্ট আমার সবচেয়ে প্রিয় ফরম্যাট। আশা করেছিলাম টেস্টেই আগে সুযোগ পাবো; কিন্তু পেলাম ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে। তবে এ নিয়ে এখন আমার চিন্তা নেই। নির্বাচকরা দলের জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন।’আচমকা টেস্ট দলে সুযোগ পেয়ে গেলেন। এ নিয়ে খুব একটা উচ্ছসিত নন সৈকত। তবে, উচ্ছসিত হবেন, যদি একাদশে থাকতে পারেন, যদি অভিষেকটা হয়ে যায় তাহলে। সৈকত বলেন, ‘ভারতের মতো একটা দেশের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক, এটা তো স্বপ্নের মতো। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে কি-না জানি না। তবে যদি বাস্তবায়ন হয়ই, তাহলে আমি চেষ্টা করবো, নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার জন্য। দলের জন্য সবসময়ই কিছু না কিছু অবদান রাখতে চাই। সুযোগ পেলে এবারও নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করবো।’তবে একাদশে নিজের জায়গা হবে কি-না তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন সৈকত। কারণ, নিজের কোনো জায়গা দেখছেন না তিনি এই দলে। সেটা টিম কম্বিনেশনের কারণে। তিনি এখনও সাধারণত ব্যাট করেন ছয় কিংবা সাতে। এই দুটি জায়গায় রয়েছেন সাকিব এবং সাব্বির। এরপর মিরাজ। একজন অফ স্পিনার বাড়িয়ে তো মোসাদ্দেককে হয়তো নেয়া হবে না। কারণ, ভারতীয় দলে অধিকাংশই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অফ স্পিনার মিরাজ তো আছেই। অর্থোডক্স সাকিব আছেন। তবুও যদি দলে সুযোগ পান তাহলে নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন সৈকত।কিন্তু দীর্ঘ এই ভ্রমণক্লান্তি আর হঠাৎ দলে ডাক পাওয়ার পর এভাবে ছুটে এসে পারফর্ম করা কতটা সহজ কিংবা কঠিন হবে? মোসাদ্দেক বললেন, ‘দেখুন আমরা তো এমনিতেই প্রথম শ্রেণির চারদিনের ম্যাচের মধ্যে ছিলাম। বিসিএল খেলছিলাম। সুতরাং, প্র্যাকটিসের মধ্যেই ছিলাম বলতে পারেন। সুতরাং, এটাকে হঠাৎ বলা যাবে না। চারদিনের ম্যাচ থেকে এখন পাঁচদিনের ম্যাচ হবে- এটাই যা পার্থক্য।’বিএ
Advertisement