প্রায় ৩৪ বছর পর রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার লোগো শোভা পাচ্ছে। এখন পর্যন্ত উদ্বোধনের চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ না হলেও দ্রুতগতিতে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। বাংলামোটর থেকে শাহবাগ কিংবা মিন্টো রোডে যাতায়াতকারী সবার দৃষ্টিতেই হোটেলটির নতুন লোগো চোখে পড়ছে। হোটেলটি কবে নাগাদ চালু হবে তা জানতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ আন্তর্জাতিকমানের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ফিরে আসছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড (বিএসএল) ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপের মধ্যে নতুন করে হোটেলটি চালুর জন্য ৩০ বছরের চুক্তি হয়। বিএসএল এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে চার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হোটেলটিতে ব্যাপক সংস্কার চলছে। বিএসএল এর একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে বর্তমানে প্রতিটি পাঁচ তারকা হোটেলে কক্ষের আয়তন ৪০ স্কয়ার মিটার। সে হিসেবে কক্ষগুলোর আয়তন বৃদ্ধি করা হয়। তবে আয়তন বৃদ্ধি করার ফলে হোটেল কক্ষের সংখ্যা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ রূপসী বাংলা হোটেলে কক্ষের সংখ্যা ২৭০টি থাকলেও সংস্কারের পর হোটেল কক্ষের সংখ্যা হবে ২২৬টি।তারা জানান, আগে সুইমিং পুল নিচতলায় ছিল। সুইমিং পুলটিকে লেভেল থ্রিতে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সুইমিং পুলের পাশে চারটি রেস্টুরেন্ট ও একটি বার থাকবে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সভা, সেমিনার, বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আগে ৯টি হলরুম ছিল। এখনও সংখ্যা একই থাকছে তবে হলরুমগুলোতে আমেরিকা, লন্ডন ও দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঁচতারকা হোটেলে লাইটিংসহ অত্যাধুনিক যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ জুন থেকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত পাঁচ তারকা হোটেল রূপসী বাংলা সংস্কারের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৬ সালে এ হোটেলটি যাত্রা শুরুর পর সেবারই প্রথম বন্ধ হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এটি বন্ধ হয়নি, চালু ছিল। সে সময় হোটেলটিকে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। হোটেলটিতে অবস্থান করে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন বিদেশি সাংবাদিকরা। পাকিস্তানি সেনাদের নির্বিচারে মানুষ মারার খবর এই সাংবাদিকরাই সে সময় সারা বিশ্বে প্রচার করেছিলেন।নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রূপসী বাংলা হোটেলটি লাভজনকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০১১ সালে ৪০ কোটি, ২০১২ সালে ৪৭ কোটি ও ২০১৩ সালে ১৯ কোটি টাকা মুনাফা করে। হোটেলটি অনেক পুরোনো হওয়ায় ক্রমেই অতিথির সংখ্যা কমে যাচ্ছিল। এ কারণে নতুন করে চুক্তি ও সংস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এ হোটেলের নাম ছিল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। পরবর্তীতে শেরাটন কর্তৃপক্ষ ২৫ বছরের চুক্তিতে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোটেল শেরাটন নামে এটি পরিচালনা করে। পুনরায় চুক্তি না হওয়ায় নতুন করে হোটেল রূপসী বাংলা নামকরণ করা হয়। সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত রূপসী বাংলা নামেই পাঁচ তারকা হোটেলটি চালু ছিল।জানা গেছে, রূপসী বাংলা হোটেলের স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রূপসী বাংলার সহযোগী প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও বলাকা লাউঞ্জে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষে তারা আবার নতুন নামের হোটেলে যোগদান করবেন।কবে নাগাদ হোটেলটি চালু হতে পারে এ ব্যাপারে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল, ঢাকার পরিচালক (মার্কেটিং) শাহিদুজ সাদিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নতুন রূপে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা যাত্রা শুরু করবে।তিনি জানান, আমেরিকা ও ইউরোপের পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে আন্তর্জাতিকমানের যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে নতুনভাবে চালু হতে যাওয়া ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলেও সেসব সুযোগ-সুবিধা থাকবে।এমইউ/ওআর/বিএ
Advertisement