বিশেষ প্রতিবেদন

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ভোগান্তিতে গাবতলীবাসী

রাস্তার এক পাশ দিয়েই যাচ্ছে দুই দিকের যানবাহন। ফলে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকছে আধাঘন্টা বা তারও বেশি। রাস্তার অপর পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ড্রেনের নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।একই রাস্তায় গত ৩ মাসে ২ বার খোঁড়াখুঁড়ি হওয়ায় বিরক্তির শেষ নেই যাত্রীদের। উন্নয়নের কথা বলে রাস্তা বন্ধ করে দিলেও চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় বিরক্তি চরমে। এর থেকে আশু মুক্তি চান তারা।রাজধানীর অন্যান্য স্থানের ন্যায় একই চিত্র দারুস সালাম থেকে আমিন বাজার ও গাবতলী মাজার রোড থেকে মিরপুর-১ এলাকার। স্থানীয়রা জানান, একবার ওয়াশার লোকজন মাঝ বরাবর রাস্তা কেটে সংস্কার কাজ করেছেন। ভোগান্তি চলে আড়াই মাস। সে কাজ শেষ হতে না হতেই হাজির সিটি করপোরেশন। রাস্তা কাটায় হচ্ছে যান্ত্রিক শব্দ দূষণ। নির্মাণ কাজ করার সময় পর্যাপ্ত পানির ব্যবহার না থাকায় পুরো এলাকা প্রায়ই থাকছে ধূলোয় অন্ধকার। সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের।এ দুই রুটের নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগ, কয়েকদিন পরপর একই রাস্তায় একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কোনো মানে হয় না। সবাই এক সঙ্গে কাজ শুরু করলে রাস্তাও টেকসই হয়, আবার যাত্রীদেরও বার বার ভোগান্তি পোহাতে হয় না। কিন্তু ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন, গ্যাস, সওজসহ নানা সরকারি প্রতিষ্ঠান আলাদা ভাবে কাজ করায় বছর জুড়ে শুধু ভোগান্তি আর ভোগান্তি।রোববার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কল্যাণপুর হতে আমিনবাজার পর্যন্ত রাস্তায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নসহ নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্প’ এর কাজ চলছে। দুই লেনের মাঝ বরাবর ড্রেনের কাজ চলায় রাস্তার প্রায় অর্ধেক অংশ জুড়ে লাল ফিতায় সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। লেখা ‘উন্নয়নমূলক কাজ চলিতেছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দু:খিত -ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।’ ফলে গাবতলীগামী যানবাহনের গতি টেকনিক্যাল মোড়ে থেকে কমিয়ে ধীরে ধীরে যেতে হচ্ছে পর্বত সিনেমা হল পর্যন্ত।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাস্তা গর্ত করে আর.সি.সি. ড্রেন, আর.সি.সি পাইপ লাইন লেভেলিং কোর্স, ফুটপাত, ওয়ারিয় কোর্স ইত্যাদি কাজ করা হচ্ছে। মেসার্স খন্দকার শাহীন আহমেদ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এ কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।গাবতলীতে কথা হয় সহকারি ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুর রহিমের সঙ্গে। তিনি জানান, জনগণ উন্নয়নও চায়, আবার ভোগান্তিও পোহাবে না। তা কি করে হয়? উন্নয়ন চাইলে তো একটু সমস্যা ভোগ করতে হবেই। কাজ শেষ হয়ে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আর এসব অভিযোগ আমার কাছে করে কোনো ফায়দা নেই, প্রজেক্টের প্রধান খুদরত উল্লাহকে জানান।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কাজের প্রধান ঠিকাদার খন্দকার শাহিন আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন আমাদের কাজ দিয়েছে, যথা সময়ের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনগনকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঠিকই, তবে তা সাময়িক। আশাকরি আগামী ২৪ আগস্টের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।অন্যদিকে গাবতলী মাজার রোড থেকে মিরপুর-১ পর্যন্ত রাস্তার একপাশে ড্রেনের সংস্কার কাজ করছে মাইসা ট্রেডার্সের শ্রমিকরা। তবে, সরেজমিনে ঘুরে দেখার সময় ওই প্রতিষ্ঠানের কাউকে পাওয়া যায়নি।জাহাঙ্গীর আলম নামে এক শ্রমিক জানান, গত মাসের ২২ তারিখে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। হুমায়ুন কবীর নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, রাস্তা বন্ধ করে কাজ করায় বাস-লেগুনা কর্মচারী ও প্রাইভেটকারের যাত্রীদের সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতণ্ডার সম্মুখীন  হতে হয়। আবার রাস্তা বন্ধ না করে কাজ করলে দুর্ঘটনা ঘটলেও সে দায় আমাদেরেই ঘাড়ে এসে পড়ে। এজন্য ওয়াশা কিংবা সিটি করপোরেশন মাথা ঘামায় না।চাকুরির কারণে বৈশাখি পরিবহনে প্রতিদিনই সাভার হতে গুলশান আসেন রেবেকা সুলতানা। আগে যেখানে ২ ঘন্টা সময় লাগতো, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গত বছরের অক্টোবর হতে এখন প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগছে। সেলিনা হাসপাতালের সামনের গলির দারোয়ান আব্দর সবুর মিয়া জানান, এই মাজার রোডে গত এক বছরে কমপক্ষে ৫ বার খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, মানুষ তো বিরক্ত হবেই।জেইউ/এমএমজেড/এমএস

Advertisement