বিশেষ প্রতিবেদন

ধূলায় ধূসর বনশ্রী-বাড্ডা-রামপুরা

একদিকে শুষ্ক মৌসুম অন্যদিকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য খুঁড়ে রাখা সড়কের ধূলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজধানীর বনশ্রী, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকার মানুষের জনজীবন। প্রখর রোদে ও ঝলমলে আলোর মধ্যেও ধূলায় মাঝে মাঝে অন্ধকার হয়ে যায় রাস্তা। উন্নয়ন কাজে মাটি খোঁড়ার কারণে এলাকাজুড়ে এমন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নির্মাণ কাজে নির্দেশনা মানছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের চরম অবহেলা আর উদাসীনতার কারণেই এসব এলাকার বাসিন্দাদের এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে নানা রোগব্যাধি। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষকে চরম বিপদে পড়তে হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর আবাসিক এলাকা রামপুরা, বনশ্রী, দক্ষিণ বনশ্রী, মেরাদিয়া, মাদারটেক, বাড্ডা ও তার আশপাশের এলাকাগুলোতে চলছে ঢাকা ওয়াসাসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার উন্নয়ন কাজ। সংস্থাগুলোর পানির লাইন পুনঃস্থাপন, স্যুয়ারেজ লাইন সংস্করণ, সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ফ্লাইওভার বা ইউলুপ নির্মাণ, ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহৃত বালি, সিমেন্ট ও ইট থেকে সৃষ্ট ধূলাবালিতে ধূসর হয়ে পড়েছে রাজধানীর রামপুরার আশপাশের এলাকাগুলো।শুধু তাই নয়, দালান-কোঠা বা অবকাঠামো ভাঙার সময়ও যথাযথ নিয়ম ও প্রতিরোধক ব্যবস্থা না নেয়ায় ধূলাবালির কারণে পরিবেশের মারাত্মক দূষণ ঘটছে। ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম উদাসীনতা এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই এলাকাজুড়ে পরিবেশের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে রাজধানীতে বিদ্যমান জনদুর্ভোগের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ধূলাবালির দুর্ভোগ। ধূলার কারণে সর্দি, চর্মরোগ, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ নানা রকম জটিল রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে।সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রাস্তার দু’পাশ খুঁড়ে রাখায় ধূলাবালিতে ধূসর হয়ে পড়েছে রামপুরার আশপাশের এলাকা। সেই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পানির নতুন লাইন স্থাপনের জন্য রাস্তা খুঁড়ে মাটি স্তূপাকারে রাখা হয়েছে। বাতাসে মাটিগুলো ধূলায় পরিণত হচ্ছে।সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধূলা নিয়ন্ত্রণের কথা থাকলেও সংস্থাটির উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে।এদিকে ধূলা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার কয়েকটি গাড়িও রয়েছে। এগুলো দিয়ে পানি ছিটিয়ে সহজেই ধূলা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে প্রতিদিনই ধূলাবালি সঙ্গে নিয়েই এলাকাবাসীকে চলাচল করতে হচ্ছে।এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। ইতোমধ্যে জনবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। তবে ধূলাবালির জন্য তিনি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ি করেন। এজন্য তাদেরকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া, মাদারটেক এবং বনশ্রীর এ থেকে জে ব্লক পর্যন্ত সড়কে ওয়াসার পানির লাইন বসানোর কাজ চলছে। গত এক মাস ধরে সড়কগুলোর উভয় অংশজুড়ে মাটি খুঁড়ে রাস্তায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কবে এ কাজ কবে শেষ হবে তা কেউ জানে না। সড়কজুড়ে মাটি ও ধূলার স্তর পড়ে গেছে। এতে সড়কগুলোতে পায়ে হেঁটে চলাচল দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আশপাশের দোকানিরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় অন্তত ১০টিরও বেশি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে আরো অন্তত ২০টি। ধূলার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। ধূলাবালি থেকে পরিত্রাণের জন্য মাস্ক লাগিয়ে কোনো কাজ হয় না। বাতাসে মিশে অক্সিজেনের সঙ্গে ধূলাবালি শরীরে প্রবেশ করে মাথা ব্যথা, শ্বাস-কষ্ট, হাঁপানি, যক্ষা, সর্দি, কাশি, সাইনাসসহ অনেক রোগব্যাধি দেখা দিচ্ছে। শিশুরা নিউমনিয়া ও সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের স্কুলের সামনের কাজী বাড়ি-মেরাদিয়া হাট পাকা হলেও এর ওপর বালির স্তর পড়ে গেছে। সামান্য একটা মটরসাইকেল গেলেই ধূলায় অন্ধকার হয়ে যায়। হাঁটা যায় না। রাস্তার ধূলাবালি আশপাশের দোকান পাট এবং বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। প্রতিদিন বাড়ি গিয়ে স্কুল ড্রেস পরিষ্কার করতে হয়।বনশ্রীর ই- ব্লকরে ব্যবসায়ী রিয়াজ রহমান বলেন, ধূলার কারণে দোকানের দরজা খুলে রাখা যায় না। বাইরেও কোনো মালামাল রাখা যায় না। ধূলার কারণে গ্রাহকও কমে গেছে। দোকানের তাকগুলোতে ধূলার স্তর পড়ে গেছে। মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।একই অবস্থা মালিবাগ, মালিবাগ-রেলগেট, মালিবাগ-মগবাজার, দক্ষিণ বনশ্রী, রামপুরা ও বাড্ডা সড়কের। এসব এলাকায় ঢাকা ওয়াসার উন্নয়ন কাজ চলছে মন্থর গতিতে। বাড্ডা ইউলুপ নির্মাণ কাজে সৃষ্ট বালু বাতাসের সঙ্গে মিশে এলাকার পরিবেশ দূষিত করছে।এমএসএস/এআরএস/এমএস

Advertisement