বিশেষ প্রতিবেদন

উন্নয়নের মহাসড়কে ভোগান্তি

‘সাবধান! সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আদেশক্রমে- ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অথবা ঢাকা ওয়াসা।’ এমন সাইনবোর্ড লাগিয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়কে উন্নয়নের কাজ চলছে। নিয়মে রয়েছে- জনদুর্ভোগ হয় এমন সময় সড়ক খোঁড়া যাবে না। ২৮ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে সরকারি ছুটির দিন ও রাতের বেলায় কাজ করতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম না মেনে সড়ক-মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ করায় ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ।রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে রাজধানীর মালিবাগে একদিকে ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ, অন্যদিকে সেবা সংস্থার রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। দুই উন্নয়ন কাজে মালিবাগ একাকার রেলগেট থেকে শুরু করে চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত সড়কে বছরের বেশিরভাগ সময়ই লেগে থাকে জলাবদ্ধতা। দুই বছর ধরেই বর্ষাকালের পাশাপাশি শীতকালেও একই চিত্র দেখা গেছে। মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের মালিবাগ রেলগেট অংশের কাজে শুরু থেকেই এমন চিত্র দেখা গেছে।মালিবাগ রেলগেটে দেখা গেছে, রেলগেট থেকে সিনেমা হল পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে জলাবদ্ধতা। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলো অতি সাবধানতার সঙ্গে ধীরে ধীরে চলছে। মোটরসাইকেল কিংবা রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে বিকল্প পথে। সড়কের এমন বেহাল দশার কারণে উল্টোপথে চলতে দেখা গেছে মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন।অন্যদিকে একটু সামনে গেলেই আবার ১৫ ফুটের সরু রাস্তার মধ্যে প্রায় ৮ ফুট রাস্তাই কেটে সেখানে ঢাকা ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন, সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ লাইন ও ডিপিডিসির বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন সংযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী অন্যদিকে নিচের সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ কেটে সেবা সংস্থাগুলোর সংযোগ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। একটু বেখেয়ালে চললেই ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর এই ড্রেনগুলোতে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গত ছয়-সাত মাস ধরেই এমন অবস্থা দেখা গেছে। ফলে এ সড়কটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে।রামপুরা ব্রিজে থেকে টেলিভিশন ভবন পর্যন্ত সড়কের মাঝপথ ধরে সড়ক কাটার মেশিন দিয়ে রাস্তার পিজ কেটে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। এতে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি পথ বন্ধ রয়েছে। এ সড়ক দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চালাতে হচ্ছে। অন্যদিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী রোডের দক্ষিণ পাশে চলছে ঢাকা ওয়াসার পানির লাইন বসানোর কাজ। এ সড়কটির বিশাল অংশজুড়ে রাস্তা কেটে মাটির ওপর রাখা হয়েছে। আর যানবাহনের চাকার সঙ্গে ধুলা বাতাসে মিলেমিশে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ধুলার কারণে চলাচল যেন দায়।শুধু এ সড়কগুলো নয়, একই চিত্র দেখা গেছে রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার ভেতরের সড়কগুলোতে। এ দুটি এলাকার প্রতিটি ব্লকে ঢাকা ওয়াসার আধুনিক পানির লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে এর প্রতিটি সড়কই উল্টানো অবস্থায় পড়ে আছে। কোথাও কোথাও স্যুয়ারেজ বা পানির লাইন কাটা পড়ায় পানি জমে জলাদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এসব সড়ক দিয়ে হেঁটে চলা দুরূহ।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া, মাদারটেক এবং বনশ্রীর এ থেকে জে ব্লক পর্যন্ত সড়কে ওয়াসার পানির লাইন বসানোর কাজ চলছে। গত এক মাস ধরে সড়কগুলোর উভয় অংশজুড়ে মাটি খুঁড়ে রাস্তায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। কবে এ কাজ শেষ হবে কেউ জানে না। সড়কজুড়ে মাটি ও ধুলির স্তর পড়ে গেছে। এতে সড়কগুলোতে পায়ে হেটে চলাচল দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। আশপাশের দোকানিরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় অন্তত ১০টিরও বেশি স্কুল ও কলেজ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে আরও অন্তত ২০টি। প্রতিদিন এলাকার অভিভাবকরা তাদের শিশুদের এসব স্কুল ও কলেজে পাঠান। ধুলার কারণে তাদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। ধুলাবালি থেকে পরিত্রাণের জন্য নাকেমুখে মার্কস লাগিয়ে, চশমা চোখে কিংবা বিকল্প উপায় খোঁজার পরেও কোনো কাজে আসছে না। বাতাতে মিশে অক্সিজেনের সঙ্গে ধুলাবালি শরীরে প্রবেশ করে মাথা ব্যথা, শ্বাস-কষ্ট, হাঁপানী, যক্ষা, সর্দি, কাশি, সাইনাস, এলার্জি-চর্মপীড়াসহ অনেক রোগ-ব্যাধি হচ্ছে। বিশেষ করে এর প্রভাব বেশি পড়ে শিশুদের ওপর। যার কারণে শিশুরা নিউমোনিয়া, সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আশপাশের দোকান ও বাসা-বাড়ির বাসিন্ধারাও পড়েছেন বিপাকে।দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বেশিরভাগ সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি এলাকায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়া ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, ডেসকোসহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থা সড়কের নিচে থাকা সার্ভিস লাইন মেরামত করতে প্রতিনিয়ত রাস্তা কাটছে। তবে এই কাটাকাটিতে সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে নগরবাসীকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়।  সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সড়ক খননের অনুমতি দিয়ে থাকে সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে জনদুর্ভোগ হয় এমন সময় সড়ক খুঁড়া যাবে না। অনুমতির ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে সরকারি ছুটির দিন ও রাতের বেলায় কাজ করার জন্য তাগিদও থাকে।এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলছে। অন্য সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজের সমাপ্তি ঘটবে।এমএসএস/জেডএ/এমএস

Advertisement