পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে ডিগ্রী নিয়ে ২০০০ সাল থেকেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন নির্মাণের সাথে। দীর্ঘ দিনের ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন ও নাটক-টেলিফিল্ম। আর এরই মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাণের। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ছবি বানানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও দিলেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজা। কনটেন্ট ম্যাটারস লি: প্রযোজিত এবং হাফ স্টপ ডাউন লি: নিবেদিত তার প্রথম ছবির নাম আয়নাবাজি। জাগোনিউজজের সাথে আলাপচারিতায় জানালেন নিজের চলচ্চিত্র সম্পর্কে-জাগোনিউজ : আজকাল অনেক নবীনরাই বিগ বাজেটের ছবি নিয়ে সরাসরি চলচ্চিত্রে অভিষেক করছেন। আর আপনি ১৫ বছর সময় নিলেন?অমিতাভ : এটা যারা যার ব্যক্তিগত বিষয়। আমার নিজের কাট-অ্যাকশান বলতে খুব ভালো লাগে। এই ভালো লাগার সাথেই জড়িয়ে থাকবো-এটাই ইচ্ছে। আর অনেক বেশি স্বপ্ন দেখতাম ছবি বানানোর। কিন্তু বললেই তো হুট করে সব হয়ে যায় না। তাই পুনে থেকে এসে প্রথমেই ছবির দিকে না গিয়ে আস্তে আস্তে এগুতে চেয়েছি। টিভিসি আর নাটক-টেলিফিল্ম করে নিজের যোগ্যতা আর সামর্থ্যটাকে ফিল্মের জন্য পূর্ণ করেছি। জাগোনিউজ : তবুও সময়টা একটু বেশি হয়ে গেল ন। একজন অমিতাভ রেজার কাজ সম্পর্কে সবার ধারণা আছে। তার প্রথম ছবিটা আসছে ১৫ বছর পর। একটু অবাক করা ব্যাপার নয়?অমিতাভ : মোটেও না। আমি আগেই বলেছি কাট-অ্যাকশান বলাতেই আমার আনন্দ। সেটা যেখানেই হোক। তবে একজন নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ করার দারুণ তৃষ্ণা আমার আছে। সময় একুট বেশি হলেও দর্শকদের জন্য তৃপ্তির কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। আমি বিগত দুই বছর ধরে এই ছবিটার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এর চিত্রনাট্য বারবার বদলানো হয়েছে। এটা কেবলমাত্র দর্শকদের ভালো লাগার প্রত্যাশায়। হুট করে দশটা খারাপ কাজ করার চাইতে রয়ে সয়ে একটা ভালো কাজ উত্তম।জাগোনিউজ : ছবির নাম আয়নাবাজি কেন?অমিতাভ : কারণ এখানে একটা আয়নার গল্প বলা হবে। ছবির মূল যে চরিত্র তার নাম আয়না। সে আমাদের সবারই খুব পরিচিত মানুষ। আয়না একজন বহুরপি মন্দ মানুষের প্রতিনিধি। তাকে ঘিরেই আমার ছবির গল্প এগিয়ে যাবে। জাগোনিউজ : ছবির নায়ক-নায়িকা কে?অমিতাভ : মাফ করবেন। আমার ছবিতে অভিনয় শিল্পীরা আছেন, কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। জাগোনিউজ : নায়ক-নায়িকা ছাড়া ছবিটা কেমন হবে?অমিতাভ : অবশ্যই ভালো হবে। এমন তো কোনো নিয়ম নেই যে সিনেমাতে নায়ক নায়িকা থাকতেই হবে। দেখুন, সিনেমার যে ছক আমাদের ইন্ড্রাষ্টিতে কিংবা দর্শকদের মনে যুগ যুগ ধরে আঁকা আছে, সেটা মুছে দিতে হবে। নির্দিষ্ট বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বেরিয়ে আসার সময়ও হয়েছে। সিনেমা মানেই গৎবাধা প্রেম-অ্যাকশান-গান নয়। সিনেমা অনেক বিস্তৃত একটি বিষয়। আয়নাবাজিতে আমি একটা গল্প বলার চেষ্টা করেছি। সেখানে কিছু চরিত্র আছে যারা মুখ্য এবং গৌণভাবে হাজির হবে। আয়না চরিত্রে মুখ্য একজন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। তার প্রয়োজনেই অন্য চরিত্ররা আসবে-যাবে। জাগোনিউজ : বলা হয়ে থাকে ছোট পর্দা থেকে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণে আসেন তারা মূলধারার ছবি তৈরি করেন না। সেক্ষেত্রে....অমিতাভ : ছবির কোনো ধারাতে আমি যাবো না। চলচ্চিত্র চলচ্চিত্রই। এর কোনো ধারা নেই। গল্প বলার ধরণ আর দর্শকে ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু চলচ্চিত্রের কোনো ভাগ-ধারা নেই। জাগোনিউজ : আপনি কি তবে বিশেষ কোনো শ্রেণীর মানুষের জন্য ছবি বানাতে যাচ্ছেন?অমিতাভ : একজন মানুষ সবার কাছে গৃহীত হন না। কারো পক্ষেই সার্বজনীন হওয়া সম্ভব নয়। তেমনি হয়তো সবার জন্য আমি সিনেমা বানাতে পারবো না। তবে এটা বলবো, আমার আয়নাবাজি যারা দেখবেন তারা বারবার দেখতে আসবেন। সে বিশ্বাস নিয়েই কাজে হাত দিয়েছি। জাগোনিউজ : ছবির বাজেট কতো?অমিতাভ : এ বিষয়ে এখনো পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য নেই। আপাতত একটা খসড়া বাজেট করেছি। জাগোনিউজ : ছবিতে গান থাকবে কি?অমিতাভ : হ্যাঁ, ছবির জন্য ৪-৫টি গান তৈরি করা হবে। এরইমধ্যে চিরকুট ব্যান্ড একটি গান তৈরি করেছে। তারা ছবির থিম সংটাও বানাবে। এর বাইরে অন্য গানগুলোর জন্য হাবিব, অর্ণব ও ফুয়াদের সাথে কথা হচ্ছে। ইচ্ছে আছে চলতি বছরই ছবিটি মুক্তি দেব। তার আগেই মুক্তি পাবে গানের অ্যালবাম। জাগোনিউজ : আয়নাবাজি’র টিম নিয়ে বলুন? অমিতাভ : আয়নাবাজির বিশাল টিম। এর কাহিনী ও ভাবনা গাউসুল আলম শাওনের। চিত্রনাট্য করেছন অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম শাওন। সংলাপ লিখেছেন অনম বিশ্বাস ও আদনান আদীব খান। প্রযোজক আদিল খান। চিত্রগ্রাহক হিসেবে আছেন রাশেদ জামান। নির্বাহী প্রযোজক এশা ইউসুফ। ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করবেন চঞ্চল চৌধুরী, গাউসুল আলন শাওন, লুতফর রহমান জর্জ, শওকত ওসমান, হীরা চৌধুরী। আর নারী চরিত্রগুলো এখনও ঠিক হয়নি। এছাড়া এই ছবির সাথে আরো অনেক নাম ও প্রতিষ্ঠান জড়িয়ে আছে। জাগোনিউজ : বলছিলেন নারী চরিত্র এখনও ঠিক হয়নি। যেখানে সব কিছুই প্রায় ঠিকটাক সেখানে এই গ্যাপটা কেন?অমিতাভ : এটা কোনো গ্যাড নয়। নারী চরিত্র খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবো। আসলে আয়নার প্রেমে পড়ার মতো কোনো নারী এখনও চোখে পড়েনি। আয়না খুব চালাক আর মন্দ একজন মানুষ। তার প্রেমে পড়ার জন্যও তো সেইরকম একটা প্রেমিকা দরকার। যে আয়নাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। জাগোনিউজ : নারী চরিত্রদের ক্ষেত্রে কী নতুনদের প্রাধান্য দিচ্ছেন?অমিতাভ : না। কাউকে প্রাধান্য দেয়ার কিছু নেই। চরিত্রগুলোতে যাকে মানাবে তাকেউ সিলেক্ট করা হবে। নতুন-পুরোনো যে কেউ হতে পারেন। জাগোনিউজ : শুটিং শুরু হবে কবে? অমিতাভ : চলচ্চিত্রটি এ বছরই মুক্তি দিতে চাইছি। তাই আগামী মে মাস থেকেই দৃশ্যধারণের কাজ শুরু করবো। ঢাকার ভিতরেই হবে সব কাজ। জাগোনিউজ : নতুন আর কিছু করছেন?অমিতাভ : টিভিসি তো আছেই কিছু। তবে এ মুহূর্তে আয়নাবাজি নিয়েই ব্যস্ততা।জাগোনিউজ : আয়নাবাজি এবং তার জনকের জন্য শুভকামনা...অমিতাভ : জাগোনিউজকেও ধন্যবাদ। সবাইকে আয়নাবাজি দেখার আমন্ত্রণ রইলো। এলএ/পিআর
Advertisement