ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত রাজ্য ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সেটা ত্রিপুরার জন্য বয়ে আনবে এক আশীর্বাদ৷ ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কলকাতার দূরত্ব এক হাজার ৭০০ কিলোমিটার৷ কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র ১৪০ কিলোমিটার৷ স্থল কাস্টমস স্টেশনের মধ্য দিয়ে ওই দুটি শহর থেকে ত্রিপুরায় মালপত্র আনা অনেক সুবিধাজনকতো বটেই, লাভজনকও৷ এই ভৌগলিক নৈকট্যকে কাজে লাগিয়ে পরিবহণ খরচ কমিয়ে লাভজনক ব্যবসা করা সম্ভব বলে জানান ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য৷ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য ভারতের অনুকূলে হলেও ত্রিপুরা-বাংলাদেশের বাণিজ্যের ছবিটা ঠিক তার বিপরীত৷ কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ত্রিপুরায় রফতানি করে ৩৪২ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী আর সেক্ষেত্রে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে যায় মাত্র ০.৪১ কোটি টাকার সামগ্রী৷ কারণ ত্রিপুরা থেকে যেসব মালপত্র যায়, তার ওপর বাংলাদেশ ৪০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ফলে ১০০ টাকার পণ্য বাংলাদেশের বাজারে দাম পড়ে ১৪০ টাকা৷ত্রিপুরা-বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি বিরাট হওয়া সত্ত্বেও ত্রিপুরাবাসীরা উপকৃত হতে পারে যদি বাংলাদেশি পণ্য সুলভ হয়৷ এই বাণিজ্য আরো ফুলে ফেঁপে উঠবে আগামী ২০১৫ সালে, আগরতলা-আখাউড়ার মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রেলপথ চালু হলে এবং চারটি সীমান্ত হাট খুললে, বলেন ত্রিপুরা বণিক সঙ্ঘের প্রাক্তন সভাপতি প্রশান্ত ভট্টাচার্য৷ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের সাবেক চেয়ারম্যান পবিত্র কর বলেন, দেশভাগের আগে এইসব এলাকা ছিল সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত৷ ঘনিষ্ঠ ছিল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ৷ কাছাকাছি হবার কারণে এবং ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ব্যবধান কার্যত না থাকার দরুণ স্থানীয় স্তরে ব্যবসা বাণিজ্য ছিল অবাধ৷ সরকার এখন চাইছে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ব্যবসা বাণিজ্যকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে যাতে সরকার রাজস্ব আদায় করতে পারে৷ এর এক বিকল্প হলো সীমান্ত হাট৷ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়ন বিভাগের এক কর্মকর্তা স্বপন মিত্র জানান, প্রস্তাব ছিল ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য আটটি সীমান্ত হাটের৷ কিন্তু প্রথম পর্যায়ে চারটি সীমান্ত হাট খোলার কাজ চলছে।তবে প্রথমে চালু হবে মাত্র দুটি৷ সীমান্ত হাটের সুবিধা পাবে দুপারের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার মানুষ৷ বেচাকেনার পরিমাণ ১০০ ডলার বা ছয় হাজার টাকার বেশি হতে পারবে না৷ বেচাকেনা হবে প্রধানত শাকসবজি, ফলফলাদি ইত্যাদি৷ তবে লেনদেন হতে পারে ভারত ও বাংলাদেশের নিজস্ব মুদ্রায়৷ত্রিপুরার বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন চৌধুরী বলেছেন, ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়াতে ত্রিপুরাকে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে দুদেশের সরকার৷ তারজন্য ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্রিপুরা শুধু বাংলাদেশের সঙ্গেই নয় গোটা দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশ দ্বার হবে বলে জানান ত্রিপুরার বাণিজ্যমন্ত্রী জিতেন চৌধুরী৷ত্রিপুরা চেম্বার অফ কমার্সের সচিব এম. এল দেবনাথ বলেন, শুধু সীমান্ত বাণিজ্যই নয়, কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে৷ ত্রিপুরা তিন দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলবেষ্টিত৷ রাজ্যের মোট ভৌগলিক আয়তনের ৮৫ ভাগ বাংলাদেশ লাগোয়া৷ বর্তমানে সাতটি ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন আছে৷ আগরতলা, সোনামুড়া, খোয়াইঘাট, কৈলাসর, ধরমনগর, বেলোনিয়া এবং সাব্রুম৷ সীমান্ত বাণিজ্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সূত্র: ডিডব্লিউ
Advertisement