দেশজুড়ে

ছবি তুলতে গিয়ে মেয়রের টার্গেটে পরিণত হন সাংবাদিক শিমুল

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণের ছবি তুলতে গিয়েই পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর টার্গেটে পরিণত হন দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল।  শনিবার সাংবাদিক শিমুলের জানাজায় আসা তার বন্ধু ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হোসেন চাঁদ জাগো নিউজকে এ কথা বলেন।বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্রলীগ নেতা বিজয়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ কান্দাপাড়া গ্রামবাসী। মিছিলটি মেয়রের বাড়ির সামনে দিয়ে যাবার সময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী মেয়রের বাড়ি লক্ষ্য করে দুই একটি ঢিল ছোড়ে। এ সময় মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ি থেকে ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র বাহিনী দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মিছিলটিকারীদের ধাওয়া দেয়। এ ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শুক্রবার মারা যান দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল। প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হোসেন চাঁদ  বলেন, ঘটনার দিন আমি বাসা থেকে বেরিয়ে ওই রাস্তা দিয়েই মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। এই সময় মেয়র ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের  মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘর্ষের ছবি তুলছিল সাংবাদিক শিমুল। তখন আমি তাকে পেছন থেকে ডাক দেই। ছবি তুলে সে আমার ডাকে সাড়া দেয়। এ সময় একের পর এক বিকট শব্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে শিমুল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। শিমুলের দিকে তাকিয়ে দেখি সে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। প্রায় ১০ মিনিট মাটিতে পড়ে থাকে শিমুল।  মুহূর্তের মধ্যে রক্তে ভিজে গেল শিমুলের পুরো শরীর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসক তাকে দ্রুত বগুড়ায় স্থানান্তর করেন। ঘটনাস্থলে থাকা দৈনিক আমার সংবাদের শাহজাদপুর প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি ও শিমুল ভাই মিছিলের ছবি তুলছিলাম। মিছিলটি মেয়রের বাড়ির সামনে পৌঁছালে ২৫/৩০ জন লোক অস্ত্রসহ মিছিলটিকে ধাওয়া করে। এ অবস্থায় বাইরে গোলযোগ দেখে নিজের ব্যক্তিগত শটগান নিয়ে বের হন মেয়র হালিমুল হক মিরু। আর ‘অস্ত্র হাতে মেয়র’ এমন ছবিটিই তুলতে চেয়েছিলেন শিমুল ভাই। এ সময় গুলিতে হঠাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকিয়ে দেখি রক্তে ভিজে গেছেন শিমুল ভাই। জহুরুল আরও বলেন, মেয়রের হাতেই শটগান ছিল এবং গুলিটি মেয়রের বাসার দিক থেকে এসেই লেগেছে। শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু বলেন, মেয়র তার ব্যক্তিগত শটগান দিয়ে শিমুলকে টার্গেট করেই গুলি করেছেন। আমরা আমাদের সহকর্মীকে আর ফিরে পাবো না। অবিলম্বে মেয়র হালিমুল হক মিরুকে গ্রেফতার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।এ বিষয়ে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু বলেন, বাসায় আক্রমণ করায় আত্মরক্ষার্থেই আমার ব্যক্তিগত শটগান থেকে এক  রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছিলাম। ওই শটগানে আর কোনো গুলি ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত জানান, মেয়রের বাসার দিক থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। সেখানে গুলির খোসাও পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলেই মেয়েরের ব্যক্তিগত শটগানটি জব্দ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আকরামুজ্জামান জানান, সাংবাদিক শিমুলের চোখ দিয়ে গুলি ঢুকে মস্তিস্কে আটকে যায়। শুক্রবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে তার মৃতদেহ শাহজাদপুরে পাঠানো হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর রহমান বলেন, তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম রাতে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। আমি নিজেও ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলাম। সাংবাদিক শিমুলের মাথায় একটি গুলি পাওয়া গেছে। গুলিটি চোখ দিয়ে ঢুকে মাথায় আটকে ছিল। ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/জেআইএম

Advertisement