জাতীয়

অভিজাত এলাকায় জমি বিক্রিতে বিশেষ করারোপ

ঢাকা-চট্টগ্রামের অভিজাত ও বাণিজ্যিক এলাকায় জমি বিক্রিতে বিশেষ করারোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জমি বিক্রিসংক্রান্ত নতুন নির্দেশনায় কাঠাপ্রতি (১ দশমিক ৬৫ ডেসিমল) ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা দলিল মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ উেস কর আরোপ করা হয়েছে; নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার থেকে যা কার্যকর বিবেচিত হবে।জমির দলিল মূল্য কম দেখিয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি হওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জমি বিক্রিতে নতুন এ কর ধার্য করা হয়েছে। কাঠাপ্রতি ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উেস কর ৪ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি হবে, সেটিই এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হবে। জমি হস্তান্তরে আগে দলিল মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে উেস কর পরিশোধ করতে হতো।এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া অর্থবিল অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির কাজ চলছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম দিন থেকেই এসব প্রজ্ঞাপন কার্যকর। এ নির্দেশনা অনুযায়ী করদাতাদের কাছ থেকে আয়কর আদায় করা হবে।সূত্রমতে, জমি বিক্রিতে নতুন এ উেস কর প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে সারা দেশেই এটা কার্যকর করা হবে। করনীতি বিভাগ এ লক্ষ্যে কাজ করছে।জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালীতে জমি বিক্রিতে দলিল মূল্যের ৪ শতাংশ বা কাঠাপ্রতি ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ হবে, সেটিই গ্রহণ করবেন রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা। কারওয়ান বাজারের ক্ষেত্রে ৬ লাখ টাকা বা রেজিস্ট্রি মূল্যের ওপর ৪ শতাংশের মধ্যে সর্বোচ্চটা বিবেচনায় নেয়া হবে।চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে আগ্রাবাদ ও সিডিএ এভিনিউয়ে কাঠাপ্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বা ৪ শতাংশ উেস করের মধ্যে সর্বোচ্চটি কর হিসেবে কর্তন করা হবে। তবে জমির ওপর ভবন থাকলে সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রতি বর্গমিটারে ৬০০ টাকা হারে কর দিতে হবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ক্ষেত্রে করপোরেট কর কমানোয় নতুন নতুন খাত থেকে রাজস্ব আহরণে পদক্ষেপ নিচ্ছে আয়কর বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি বিক্রির ক্ষেত্রে বিশেষ এ কর আরোপ করা হয়েছে। কারণ জমি বিক্রিতে সবসময়ই তথ্য গোপন করে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়।রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মধ্যে উত্তরা, সোনারগাঁও জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর ও কাকরাইলের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ৬ লাখ টাকা বা জমির দলিল মূল্যের ৪ শতাংশ উেস করের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ হবে, সেটি কর হিসেবে আদায় করা হবে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা ও গেণ্ডারিয়ায় কাঠাপ্রতি কর ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়ায় ৩ লাখ টাকা। তবে দলিল মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ উেস কর হিসাবে নিয়ে অর্থের পরিমাণ বেশি হলে এটিই গ্রহণ করা হবে।আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে অস্বাভাবিক হারে কর বাড়ানো হয়েছে। এতে জমি রেজিস্ট্রেশনের হার অনেক কমে যাবে। সরকারও এতে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব হারাবে।’ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলায় রাজউক ও সিডিএর বাইরের এলাকার জন্য ৩ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। একই হারে কর পরিশোধ করতে হবে দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের ক্ষেত্রেও। পৌরসভা এলাকায় জমি বিক্রিতে কর ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। এর বাইরে দেশের অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ উেস কর দিলেই চলবে।বর্তমানে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকায় ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি ক্রয়ে বর্গমিটার হিসেবে নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হয়। তাহলে অর্থের উত্স নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন করা হয় না। এসব এলাকায় ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত প্রতি বর্গমিটারে করহার ৫ হাজার টাকা। এর ওপরে হলে প্রতি বর্গমিটারে কর ৭ হাজার টাকা। এছাড়া ধানমন্ডি, ডিওএইচএস, মহাখালী, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা, নিকুঞ্জ, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশি, আগ্রাবাদ ও নাছিরাবাদে ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমি ক্রয়েও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা কর পরিশোধ করতে হয়। এর বেশি হলে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। বণিক বার্তা

Advertisement