পুঁজিবাজার নিয়ে এর আগে লিখেছিলাম, বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। এছাড়াও পুঁজিবাজারকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে। অস্বাভাবিকভাবে কোন লেনদেনই বাজারকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতে পারে না। পুঁজিবাজারে খারাপ শেয়ারে কারসাজি করে দাম বাড়ানো আর বিনিয়োগকারীদের আশ্বাস বাণীর মাধ্যমে যারা বাজারে লেনদেন করাতে ছোট বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করেছিল তাদের মধ্যে অনেকেরই এই বাজারের সকল নাটকীয়তার সাথে জড়িত থাকার কথা প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১০ ও ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারি মামলায়। যারা দাওয়াত দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে বলেছেন, তাদের একজনকেও বাজারের অস্বাভাবিক লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হতে বলতে দেখা যায় নি। কৃত্রিমভাবে বাজারে ক্রেজ তৈরি করে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর একারণে অনেক ছোট বিনিয়োগকারী বাজারে টাকা হারিয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে- কে কাকে বিশ্বাস করবে? প্রতারকদের হাতে যখন বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব চলে যায় তখন তো তারা ফায়দা নিতে চাইবেই। যদি তারা বিনিয়োগকারীদের বন্ধু হতেন তবে যেমন করে বাজারে দাওয়াত দিয়ে অভিনব কায়দায় ছোট বিনিয়োগকারীদের দিয়ে বিনিয়োগ করিয়েছেন, তারা অস্বাভাবিক বাজারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিতেন। বহুবার এরই মধ্যে এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথেও দেন দরবার করেছে বিভিন্ন মহল। বাজার যতটুকু বেড়েছিল তার চেয়ে কমেছে বহুগুণ।এদিকে মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির পুঁজিবাজার সম্পর্কে সতর্কতার কথা বলেছেন। গভর্নর তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, বাজার আবারো গতিশীল হওয়ায় মনিটরিং বাড়ানো জরুরি, যাতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন। এছাড়াও পুঁজিবাজারের স্বার্থে স্পন্সর শেয়ার এবং ঝুকিপূর্ণ শেয়ারে মার্জিন ঋণ কঠোর করার পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। আর এর প্রভাবে আপাতত বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা থাকলেও গভর্নরের কথা মাথায় রেখেও যদি ছোট বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হন তবে বাজার ধস অনেকাংশেই রোধ হবে।গভর্নরের বক্তব্যে স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছিল, ২০১০ সালের ন্যায় বাজারে যাতে আবার ধস না নামতে পারে সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে বিএসইসি। এরপরও যাতে আবারো সে অবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সত্যিই যদি বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা যায়, তবে এই বাজারে লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।আরেকটি কথা খুব ভালোভাবেই তিনি প্রকাশ করেন, ব্যাংক এবং আর্থিক খাত থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা যাতে কেউ শেয়ার বাজারে প্রবেশ করাতে না পারে সেজন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরিং জোরদার করবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর এক্সপোজারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এধরনের ব্যবস্থা যদি সত্যিই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেয়া হয় তবে বাজার দীর্ঘমেয়াদী একটি ভালো অবস্থানে যাবে। পুঁজিবাজার হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া ও কমে যাওয়া কারোরই কাম্য নয়।এছাড়াও নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরে পুঁজিবাজারের আকার বাড়ছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান সূচক বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে পুঁজিবাজারের অবদান ১৫ শতাংশ। এটা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই পুঁজিবাজার তার নিজের মতই চলতে দেয়া উচিৎ। জোর করে বাজার বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের অস্থিরতার মধ্যে না রেখে, বাজারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক ও সচেতন করতে হবে। সেইসাথে পুঁজিবাজারে কারসাজিকারকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর বাজারের এই নেতিবাচক প্রবণতা বেশি সময় থাকবে না। পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। প্রয়োজন সতর্কতা ও জবাবদিহিতা।লেখক : বিজনেস এডিটর, এটিএন বাংলা। একাধারে সাংবাদিক, লেখক, সংবাদপাঠিকা এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালক। এছাড়াও অর্থনীতি ও পুঁজিবাজার বিষয়ে রয়েছে তার সংবাদ ও টেলিভিশন টক শো। সদস্য, এফবিসিসিআই। কো-চেয়ারম্যান এসএমই, পাট, ইয়াং এন্টারপ্রাইনার ও পুঁজিবাজার বিষয়ক স্টান্ডিং কমিটি। বর্তমানে এশিয়ান প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের সার্টিফাইড প্রশিক্ষক এবং উদ্যোক্তা।এইচআর/আরআইপি
Advertisement