দেশজুড়ে

গোলাপ ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন গাইবান্ধার কৃষকরা

গাইবান্ধার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলগুলোতে এখন অর্থকারী ফসল হিসেবে গোলাপ ফুল চাষ করা হচ্ছে। সারা বছরের ফসল হিসেবে বেশ লাভজনক হওয়ায় গোলাপ ফুল চাষেই অধিক মাত্রায় ঝুঁকে পড়ছেন স্থানীয় কৃষকরা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তালুকবাজিত গ্রামের হাবিজার রহমান ফুল উৎপাদন করে আসছেন প্রায় পাঁচ বছর যাবৎ। নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপাদন করছেন তিনি। তার উৎপাদিত ফুলের মধ্যে রয়েছে, গোলাপ, সূর্যমূখী, রজনীগগ্ধা, ডালিয়া, ঘাস ফুল, গাঁদা, জারবারা (ইন্ডিয়া)।ফুল চাষী হাবিজার রহমান জাগো নিউজকে জানান, দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষে মাসিক ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর খরচ বাদে প্রতিমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। বাগানের সকল প্রকার কাজে স্ত্রী সুফিয়া বেগমসহ পরিবারের সবাই তাকে সাহায্য করেন। এতে করে বাগানের কাজের জন্য অন্য কোন শ্রমিক প্রয়োজন হয় না তার। সাদুল্যাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের তাজনগর  গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বিপ্লব গত বছর মাত্র ৪ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন জাতের সাদা, হলুদ, লাল, কালো গোলাপ চাষ শুরু করে। এক বছরে অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে এ বছরও তিনি নতুন করে আরও বেশি জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রংয়ের গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা এবং রজনীগন্ধা চাষেও মনোযোগী হয়ে পড়েছেন। বিপ্লবের এই সাফল্যে ওই গ্রামের অন্যান্য কৃষকরাও এ বছর গোলাপ চাষ শুরু করেছেন।বিপ্লব জানান, যশোর থেকে গোলাপ চারা নিয়ে এসে তিনি প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে গাইবান্ধায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে গোলাপ ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুলের ব্যবসাও জমজমাট হয়ে উঠেছে। জেলা শহরেই গড়ে উঠেছে ৭টি ফুলের দোকান। এছাড়া উপজেলা সদরগুলোতেও রয়েছে ফুলের দোকান। তিনি আরও জানান, সাধারণত একটি গোলাপ ৩ টাকা দরে বাগান থেকে বিক্রি করা হয়ে থাকে। ব্যবসায়িরা প্রতিটি ৭ থেকে ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। তবে বিশেষ মৌসুমে যেমন- ভালবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারী, স্বাধীনতা দিবস ও বিভিন্ন দিবসে একটি গোলাপ বাগান থেকেই বিক্রি হয় ১০ টাকায়। যা দোকানে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে। কিছু দিন আগে যশোর, রংপুর এবং বগুড়া থেকে ফুল আমদানি করে এসব দোকান চালানো হতো। বর্তমানে গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলেই ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর তাদের বাইরের জেলা থেকে ফুল আনতে হচ্ছে না। এতে উৎপাদক কৃষক এবং ফুল বিক্রেতা উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলার তাজনগরসহ ওই এলাকার মাটি ফুল চাষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় বেশি ফলন পাওয়ায় ফুল চাষ করে যথেষ্ট লাভবান হতে পারছেন কৃষকরা। এ কারণে অন্য ফসলের পরিবর্তে কৃষকদের মধ্যে গোলাপ ফুলের চাহিদা বাড়ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ফুল চাষে কৃষকদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান করলে এই জেলায় ফুল উৎপাদন করে বাইরের জেলাতেও ফুল রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।এমজেড/পিআর

Advertisement