‘আশির দশকে যখন চলচ্চিত্রের রমরমা অবস্থা ছিল, তখন আমি দাপিয়ে কাজ করেছি। তবে আমাদের সময়ে এখনকার মতো এতো দ্রুত ছবির কাজ শেষ হতো না। একটা ছবির কাজ শেষ করতে ৬-৮ মাস সময় লাগতো। ভক্তি করতে কাজ করতে হতো। আমার মনে আছে, প্রয়াত বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমাকে ৯০ বার শট দিতে হয়েছিল। আর এখন শুনি এক মাসেই ছবির কাজ শেষ হয়ে যায়।’ ঢাকাই ছবির শক্তিমান অভিনেতা টেলি সামাদের প্রশ্ন, ‘এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে ছবির কাজ শেষ হওয়া সম্ভব?’ কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও এক দশক আগেও তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। শারীরিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠলেও আগের মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন না। মঙ্গলবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে ছয় শতাধিক ছবির এই অভিনেতা বলেন, ‘এটা সত্যি যে আগের চেয়ে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বেড়েছে। কিন্তু একটা ছবির কাজ করতে গেলে, সেই চরিত্রে ঢুকতে গেলে সেটা নিয়ে স্টাডি করতে হয়। আমাদের সময়ে এটা করতাম। কিন্তু এখন কেউ করে না বললেই চলে! সে কারণে অনেকের অভিনয় হয় না।’টেলি সামাদ বলেন, ‘সবাই এখন টাকার পিছনে ছুটছে। কীসের শিল্প, কীসের আর্ট! ফেসবুকে খোলামেলা ছবি প্রকাশ করে আলোচনায় আসছে, তারকা খ্যাতি, গাড়ি-বাড়ি হাঁকাতে চাচ্ছে! দিন শেষে দেখা যাচ্ছে এরা হারিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এত সংকট। পত্রপত্রিকার মারফাত জানছি, এখন এক নায়কনির্ভর আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। একজন নায়ক কখনও একটা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। তাই আমাদের শিল্পী দরকার। এছাড়া আমি মনে করি আমাদের সিনিয়র শিল্পীদের আবার চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করা উচিত। তারা ফিরলে চলচ্চিত্রের অনেক সংকট দূর হবে।’ ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় চলচ্চিত্রের পিছনে ব্যয় করেছেন। অভিনেতা দিলদারের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করেছেন টেলি সামাদ। কিন্তু এখন চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনয় শিল্পীর সংকট। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন? টেলি সামাদ বলেন, ‘আমি মনে করি কৌতুক পরিবেশন সৃষ্টিশীল একটা কাজ এবং সবচেয়ে কঠিন। এই কঠিন কাজটি দর্শকদের কাছে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে, সুতরাং হাস্যরসের সহজাত একটা ক্ষমতা শিল্পীর থাকতে হবে। যিনি তার চোখ-মুখ, হাত-পা, বক্তব্য, আঞ্চলিকতা- এগুলোর ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারবেন তিনি সফল হবেন।’ টেলি সামাদ একসময় তুমুল ব্যস্ত ছিলেন অভিনয়ে। কিন্তু এখন আর কোনো ছবিতে কাজ করছেন না। তার অভিনীত সর্বশেষ ছবি মুক্তি পায় ‘জিরো ডিগ্রী’ ( ২০১৫)। সারাদিন বাসায় থাকেন। টিভি দেখেন, ছবি আঁকেন।আগামীতে কোনো ছবিতে দেখা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বয়স হয়েছে, শরীর নিয়ম অনুযায়ী দুর্বল হয়েছে। যে কারণে চাইলেও আগের মতো যাতায়াত করতে পারি না। এরপরও একটু সুস্থ বোধ করলেই আড্ডা দিতে চলে আসি। জায়গাটা দেখলেই মনে হয় আগের দিনের কথা, অনেক ভালো লাগে। শরীর ভালো থাকলে প্রতিদিনই আসতাম। আর নতুন ছবিতে কাজ না করার কারণও এই একটাই। অনেকেই তাদের ছবিতে কাজের বিষয়ে বলে, কিন্তু শরীর দুর্বল, তাই সাহস পাই না। শুধু মনের জোর দিয়ে তো আর কাজ করা যায় না।’তবে টুকটাক বিভিন্ন স্টেজ শো-তে কাজ করছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম আর কক্সবাজারে দুটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। এছাড়া কালেভাদ্র দু-একটি নাটকে কাজ করছেন। এনই/এলএ/জেআইএম
Advertisement