ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন দু-দু`বার অলঙ্কৃত করা ড. মনমোহন সিংয়ের জীবনে এমন দিনও গেছে যখন টাকার অভাবে না খেয়েই ঘুমাতে যেতে হতো তাকে। অভাবের তীব্রতা তাকে তার তারুণ্য ও যৌবনেও কখনো কখনো পেটভরে খেতে দেয়নি। ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে অর্থাভাবে কখনো কখনো খাওয়া জুটত না। খালি পেটে বা সামান্য একটা ক্যাডবেরি চকোলেট খেয়ে রাতে শুতে যেতেন। এমন তথ্য পাওয়া গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মেয়ের লেখা এক বইতে। মেয়ে দমন সিং বাবাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে এমনটিই জানিয়েছেন।`স্ট্রিক্টলি পার্সোনাল :মনমোহন অ্যান্ড গুরশরণ` নামে ওই বইতে মেয়ে দমন সিং মা-বাবাকে নিয়ে আরো নানা অজানা তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেখানে ব্যক্তি মনমোহন সিংয়ের কথাই বেশি, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কথা কম। কম কথা বললেও বাবার রসবোধ যে খুবই উচ্চ পর্যায়ের তাও উল্লেখ করেছেন তিনি।দমন সিং লিখেছেন, দাদু অর্থাৎ মনমোহন সিংয়ের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে ডাক্তার হোক। ১৯৪৮ সালের এপ্রিলে তাই তিনি ভর্তি হন অমৃতসরের খালসা কলেজে। কিন্তু চিকিৎসাবিষয়ক পড়াশোনা কাঠখোট্টা লাগত মনমোহন সিংয়ের কাছে।কয়েক মাস পরই ডাক্তারি পড়া ছেড়ে বাবার দোকানে কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু দোকান খুলে ঝাড়ু দেওয়া, জল ভরে আনা, খদ্দেরদের তদারকি করা ইত্যাদিও একঘেঁয়ে হয়ে যায় তার কাছে। ফলে আবার পড়াশোনা শুরু করতে মনস্থির করেন। স্কুল থেকেই অর্থনীতির প্রতি একটা টান ছিল। একদল কেন বড়লোক, বাকিরা কেন গরিব, কেন হঠাৎ হঠাৎ জিনিসের দাম বাড়ে ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অর্থনীতি পড়তে শুরু করেন। ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।দেশে শিক্ষার পাঠ শেষ করে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষার পাঠ নিতে ভর্তি হন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বছরে সব মিলিয়ে ৬০০ পাউন্ড খরচ হতো। কিন্তু পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ মিলত মাত্র ১৬০ পাউন্ড। বাকি টাকার জন্য বাবার ওপর নির্ভর করতে হতো। তাই ইংল্যান্ডে খুব সতর্কভাবে খরচ করতেন তিনি। দু`বেলাই খেতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে। কারণ সেখানে কম দামে খাবার পাওয়া যেত। অন্য বন্ধুরা নিয়মিত ড্রিংকস করলেও তিনি তা করতেন কদাচিৎ। হাত খালি হয়ে যাওয়ায় অনেকবারই রাতে একটি ছয় পেন্স দামের ক্যাডবেরি চকোলেট খেয়ে শুয়ে পড়তে হয়েছে। যখন তাও জোটেনি তখন খালি পেটে ঘুমাতে গেছেন।হার্পার কলিন্স ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত ওই বইয়ে আরো বলা হয়েছে, ইয়ার্কি করে অন্য লোকের মজাদার নামকরণ করা পছন্দ করতেন মনমোহন সিং। এক ভাইকে তিনি ডাকতেন `জন বাবু` বলে। কাউকে বলতেন `চুঞ্জওয়ালে`। এমনকি গুরশরণ কাউরকে ডাকতেন `গুরুদেব` বলে।দমন সিং লিখেছেন, বাবা আধুনিক পাঞ্জাবি সাহিত্য পড়তে ভালোবাসেন। গুরুমুখী আর উর্দু ভাষা-সাহিত্য নিয়ে তার আগ্রহ আছে। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিছানার ওপর গ্যাঁট হয়ে বসে কোলে একটি বালিশ তুলে নিতেন। তার ওপর ফাইল রেখে তা দেখতেন। ঘুমাতে যেতে ভোর হয়ে যেত। আবার সকালে উঠে শুরু হয়ে যেত নিত্যদিনের ব্যস্ত কর্মসূচি। সূত্র: এনডিটিভি।
Advertisement