বিশেষ প্রতিবেদন

চরে অবকাঠামো উন্নয়নে বিশাল কর্মযজ্ঞ

নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলার একশ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তা বিশাল কর্মযজ্ঞ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এখনও সেখানে অবকাঠামো উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। পাকা সড়ক নির্মাণ, কাঁচাপাকা সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন, সাইক্লোন শেল্টার, বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, ক্লিনিক, বাসস্ট্যান্ড, গুচ্ছগ্রাম, কিল্লা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপকূলীয় বাঁধ ও স্লুইস গেট নির্মাণ এবং খাল খনন করা হয়েছে সেখানকার অধিবাসীদের সুবিধার জন্য। এছাড়া এলাকার পরিবেশ সমুন্নত রাখার জন্য লাখ লাখ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রকল্পের বার্ষিক উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব চর এলাকায় অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এখানে বসবাসরত অধিবাসীদের আয়-রোজগার বেড়েছে আগের চেয়ে তিনগুণ। চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-৪ এর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখানে বসবাসের শুরুতে একটি পরিবারের আয় ছিল মাসে ৩ হাজার ১০৯ টাকা। এখন তাদের আয় মাসে ৯ হাজার ১১২ টাকা।  এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইফাদ (ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট)। এ প্রকল্পের জন্য তারা দিয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। এছাড়া নেদারল্যান্ডস সরকার দিয়েছে ১৫ কোটি, বাংলাদেশ সরকার ৯ কোটি ও সুবিধাভোগীরা দিয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে মোট খরচ হচ্ছে ৫৮৩ কোটি টাকা। প্রকল্পে উপকূলীয় বাঁধ ১৭ কিলোমিটার, অভ্যন্তরীণ ৩৩ কিলোমিটার, স্লুইস গেট রয়েছে ৬টি ও খাল খনন করা হয়েছে ২০৬ কিলোমিটার। পাকা সড়ক ১৫৩ ও কাঁচা সড়ক ১২৯ কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া কালভার্ট/ইউ ড্রেন ১৯২, সাইক্লোন শেল্টার ৪২টি, বাজার ৭টি, ঘাট দুটি, ইউপি কমপ্লেক্স দুটি, বাসস্ট্যান্ড একটি, গুচ্ছগ্রাম দুটি, কিল্লা ১৭টি ও একটি প্রাথমিক স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিউবওয়েল ৬টি, ডিপ টিউবওয়েল ১ হাজার ১৬০টি, টয়লেট ২৩ হাজার ৯০৯টি, পুকুর দুটি ও দুটি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পে স্থায়ী ও ভাসমান ক্লিনিক রয়েছে ১৪৫টি, যাতে ১ লাখ ৫৯ হাজার জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ। জন্মবিরতিকরণ পিল দেয়া হয়েছে প্রায় ১৯ হাজার দম্পতিকে। প্রকল্প বাস্তবায়নে যেসব প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব আছে সে প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমি মন্ত্রণালয়, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এছাড়া চারটি এনজিও সেখানে কাজ করছে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে।  চর ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্টের (সিডিএসপি-৪) ল্যান্ড সেটেলমেন্ট অ্যাডভাইজর মো. রেজাউল করিম এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের আওতায় ভূমি বন্দোবস্ত, পানি ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ, কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও বনায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম ৬টি সরকারি সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ, সমবায়, সমাজসেবাসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থারও কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রকল্পের উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে অবহিতকরণ ও কার্যক্রম সম্প্রসারণ বিষয়ক একটি সেমিনার নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি দফতরের কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। সেখানে প্রকল্প এলাকায় কার্যক্রম সম্প্রসারণের উপায় ও পন্থা নির্ধারণ করা হয়। তিনি আরো বলেন, চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্প-৪ বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দারিদ্র্য বিমোচনমূলক ও সফল প্রকল্প। এফএইচএস/ওআর/এমএস

Advertisement