চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন ২০১৭) মুদ্রানীতি ঘোষণার পর দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কিছুই নেই। মূলত অযৌক্তিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় দরপতন হয়েছে। এমনকি দুই একদিনের মধ্যেই এ আতঙ্ক কেটে যাবে।ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিকে গতানুগতি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেছেন, নিয়ম রক্ষার মুদ্রনীতি যা বাস্তবায়ন কঠিন হবে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রনীতি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার তারা এসব কথা বলেন।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের বিনিয়োগ বান্ধব সতর্কমূলক এ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে করিব। দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে জুন ২০১৭ পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। যা প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে উল্লেখ করা ছিল। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত রেখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় গভর্নর বলেন, অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমকি ৭ শতাংশ এবং ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ ধরা হয়েছিল। এর বিপরীতে নভেম্বর পর্যন্ত অভ্যান্তরীণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ব্যক্তিখাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৫ শতাংশ।নতুন এ মুদ্রানীতি সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বি এস মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রায় রাখা হয়েছে। যেহেতু প্রথমার্ধের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি, তাই দ্বিতীয়ার্ধেও লক্ষ্যমাত্রায়র অর্জন নিয়ে শঙ্কা রযেছে। এর কারণ বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা নেই। আর বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহ দেয়ার মত কোনো সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনাও নেই।পুঁজিবাজারে বিষয়ে তিনি বলেন, মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন কিছু নেই। রোববার যে দরপতন হয়েছে তার যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই। বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে দরপতন হয়েছে। দুই একদিন গেলে তা ঠিক হয়ে যাবে।অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে তা গতানুগতিক। এতে নতুনত্ব কিছু নেই। মুদ্রানীতি আরও বিশ্লেষণধর্মী হলে ভালো হত। তবে এখন তা বাস্তবায়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নজর দিতে হবে।এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে না পারলে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধিও অর্জন করা সম্ভব নয়। মুদ্রানীতিতে ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ালে ভালো হত। কারণ ছয় মাসে ১৫ শতাংশ অর্জন হয়েছে। তাই এটা ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ না করে ১৭ থেকে সাড়ে ১৭ হলে ভালো হত। কারণ লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকলে ব্যাংকারদের ঋণ দেয়ার প্রবণতা বেশি থাকে বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।কর্মসংস্থান বাড়াতে সুনির্দিষ্টি নয় উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর বলেন, ব্যক্তিখাতে ঋণের বাড়ানোর কথা রয়েছে। তবে যদি এটা সার্ভিস খাতে ঋণ যায় তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে না। তাই উৎপাদনশীল খাতে এ ঋণ বাড়ানোর সুনির্দিষ্টি থাকা দরকার ছিল।উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছর দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে থাকে। ছয় মাস অন্তর এ মুদ্রানীতি একটি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে।এসআই/আরএস
Advertisement