জাতীয়

চলতি সংসদের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে রোববার

চলমান জাতীয় সংসদের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ১১ জানুয়ারি সরকার গঠন করার পর ২৯ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের পথচলা শুরু হয়। ওই বছরের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসন গ্রহণ করে।এই সংসদ নিয়ে নানা মহলে বিরূপ মন্তব্য থাকলেও ডেপটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া তাদের সঙ্গে একমত নন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কেউ যদি নির্বাচনে না আসে সেটা তাদের ব্যর্থতা। বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। কিন্তু এর জন্য গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা থেমে থাকতে পারে না। সঙ্গত কারণে থেমেও নেই। বর্তমান সংসদ খুব ফলপ্রসূ এবং কার্যকর।সংসদের আইন শাখা জানায়, তিন বছরে মোট ৯৬টি আইন পাস হয়েছে। এসব আইনের মধ্যে অনেক নতুন, মৌলিক ও সংস্কারমূলক আইনও রয়েছে। এর মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ ১৩টি অধিবেশন শেষ করেছে। আর বর্তমানে শীতকালীন অধিবেশন চলছে। এ অধিবেশনে জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন ছাড়াও ৩টি বাজেট পাস করা হয়েছে।আইন প্রণয়নের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে এবার সংসদে সংবিধানের ১৬তম সংশোধন আইন পাস করা হয়। তাছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আইন সংসদের ১২টি অধিবেশনে পাস করা হয়।এ আইনগুলোর মধ্যে প্রথম অধিবেশনে ২টি, দ্বিতীয় অধিবেশনে ৬টি, তৃতীয় অধিবেশনে ৫টি, চতুর্থ অধিবেশনে ৬টি, পঞ্চম অধিবেশনে ৮টি, ষষ্ঠ অধিবেশনে ৫টি, সপ্তম অধিবেশনে ৬টি, অষ্টম অধিবেশনে ১০টি, নবম অধিবেশনে ৯টি দশম অধিবেশনে ১৪টি, একাদশ অধিবেশনে ১৬টি, ১২তম অধিবেশনে ৬টি ও ১৩তম অধিবেশনে ৫টি আইন পাস করা করা হয়। এসব আইন ইতোমধ্যে কার্যকরও করা হচ্ছে।এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত ও স্বল্পসময়ে জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্রিটিশ আমলে প্রণীত বিভিন্ন আইন সংশোধন এবং আমূল পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।এই সংসদেই পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বাংলাদেশি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।বিদেশে সুনাম অর্জন করলেও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদ তেমনভাবে কার্যকর হয়নি। শক্তিশালী বিরোধীদল না থাকায় সংসদীয় কাজে ভাটা পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর থেকেই সংসদ চলছে ঢিমেতালে। তবে সংসদে না থাকলেও আক্রমণের শিকার হয়েছে বিএনপি। আর সংসদীয় কমিটিগুলো প্রকৃতপক্ষে কার্যকর হতে পারেনি। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি মেনে একটি ছাড়া আর কোনো সংসদীয় কমিটিই বৈঠক করেনি।বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে সরকারের ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করার কথা থাকলেও আসলে তা হয়নি। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রত্যেকটি সংসদীয় কমিটিকে মাসে কমপক্ষে একটি করে বৈঠক করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও কোনো সংসদীয় কমিটিই তা গ্রাহ্য করেনি।বিএনপি সংসদে না থাকলেও প্রতিটি অধিবেশনে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবার নিয়ে বিশদ আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এখনো লাগামহীনভাবে চলেছে সেই সামালোচনা।এদিকে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বর্তমান সংসদে গত ১৩টি অধিবেশনে ৯৬টি আইন পাস নিঃসন্দেহে আইনসভার কৃতিত্ব। আর এটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক।তিনি বলেন, এছাড়া এ সরকারের বিগত আমলে নবম জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের মাধ্যমে ’৭২ এর সংবিধানের মূল নীতিগুলো ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।কার্যকর ও প্রাণবন্ত হয়নি সংসদসরকার ও বিরোধীদল জাতীয় সংসদকে কার্যকর ও প্রাণবন্ত রাখার ঘোষণা দিলেও গত বছরের অধিবেশনগুলোতে কোরাম সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দশম সংসদের ১১তম এই অধিবেশনের প্রায় প্রতিটি দিনেই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু করতে হয়েছে। বিশেষ করে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর আরও সংকটাপূর্ণ অবস্থায় পড়তে হয়েছে সংসদকে। সাধারণত সিনিয়র এমপি এবং মন্ত্রীদের হাজিরা কমে সংসদে। কিন্তু এবার হলো পুরো ব্যতিক্রম। অধিবেশনে পুরনোদের দেখা মিললেও নতুনদের প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, জাতীয় সংসদে বিরোধীদল কোথায় দেখেন? আমি তো দেখি না। বিরোধীদল তো সংসদে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। এরা (জাতীয় পার্টি) বিরোধীদল না সরকারি দল, না কোনো দল, বিষয়টি নিরূপণ করা দুরূহ। তারা সরকারের অংশ হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নেয়াতেই ব্যস্ত। এছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংসদের এমপিদের কোনো উদ্যোগ সারাবছর চোখে পড়েনি।দুর্লভ স্থাপত্যকর্মের ঐতিহাসিক নকশাগত বছরই সরকার ও জাতীয় সংসদ সংশ্লিষ্টদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রস্তাবিত আইয়ুব নগর প্রকল্পসহ সংসদ ভবনের দুর্লভ স্থাপত্যকর্মের ঐতিহাসিক নকশাগুলো দেশে আনতে সক্ষম হয়েছে। এই নকশা বাংলাদেশের হাতে ছিল না। আর লুই আই কানের এই মূল নকশা না পাওয়ার কারণে সংসদ ভবন এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম আটকে যায়।যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কাইভে এই নকশার সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর তার উত্তরসূরিদের নিকট থেকে ওই নকশা সংগ্রহ করতে গত ২৯ মে জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব (আপিএ) আ ই ম গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যায়।এ প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন শাখা-৯) অধিশাখা মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব ও স্থাপত্য অধিদফতরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম।তারা সেখানে নকশাগুলো দেশে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেন। সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ক’দিন আগেই নকশাগুলো বাংলাদেশের হাতে আসে।এইচএস/বিএ/আরআইপি

Advertisement