সাহিত্য

বইমেলায় ৩টি প্রবেশ পথ রাখা হোক

বছর ঘুরে আবারো বইমেলা দোর গোড়ায় কড়া নাড়ছে। ১ ফেব্রুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে একমাসব্যাপী বাঙালির প্রাণের মেলা। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। লেখক-প্রকাশক-ক্রেতা-পাঠকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে মেলা প্রাঙ্গন। ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্টল বরাদ্দ শেষ হয়েছে। স্টল তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে। ছাপাখানা, বাইন্ডিং কারখানা গুলোয় অসম্ভব হুড়োহুড়ি। শেষ মুহূর্তে নিজের বইটি মেলায় নিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা লেখকের। যেসব নতুন প্রকাশক আবেদন করে স্টল পাননি তারা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একে-ওকে ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একটা স্টলের জন্য। প্রাণের মেলার সাথে কোনোভাবে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখার এই সুযোগ কেউ হারাতে চাচ্ছেন না। গত কয়েক বছর ধরে মেলার মূল অংশ চলে এসেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল মাঠে। তবে নিজেদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে কিছু প্রকাশনা সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়া অংশটি এখনো একাডেমি চত্বরে রেখে দিয়েছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ধারণা করছি নিকট ভবিষ্যতে বাস্তবিক কারণেই, পুরো মেলাই চলে আসবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।মূল মেলাই যেখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন্দ্রিক সেখানে, নতুন বই জমা, ঘোষণা, মোড়ক উন্মোচন এবং মিডিয়া অংশটির বাংলা একাডেমি চত্বরে কি কাজ থাকতে পারে? এবারই প্রথম স্টলের ছাউনিতে ত্রিপালের পরিবর্তে টিন ব্যবহার করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছর থেকেই বলে আসছিলাম ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের দেশে বৃষ্টি-বাদলের সিজন। প্রতিবছরই মেলা চলাকালীন প্রাকৃতিক কারণেই দু’একবার ঝড়-বৃষ্টি হয়-ই। সেজন্য ছাউনিতে পরিবর্তন আনা দরকার। অবশেষে মেলা কর্তৃপক্ষ এটা বিবেচনায় নিয়েছেন, দেখে ভালো লাগছে। তবে প্রতিবছরই মেলার জন্য নিত্য-নতুন ডিজাইন উপহার দেয়া এখনো বহাল রয়েছে। এবারের ডিজাইনও গতবছরের চেয়ে ভিন্ন। আশা করবো ভবিষ্যতে মেলার জন্য একটা স্থায়ী ডিজাইন ঠিক করা হবে। যাতে ক্রেতা পাঠক অহেতুক হয়রান না হন। নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মেলায় ঢোকার জন্য একটিমাত্র প্রবেশ পথ রাখা হয়। এটা অযৌক্তিক। দিনে দিনে মেলায় আগত পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে, সেটা মাথায় রেখে প্রবেশ পথের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় একটিমাত্র প্রবেশ পথ দিয়ে মেলায় ঢোকার জন্য বিশাল লম্বা লাইনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। সাথে শিশু থাকলে এটা ভোগান্তির পর্যায়ে চলে যায়। সেজন্য মেলায় ঢোকার জন্য অন্ততঃ তিনটি প্রবেশ পথ থাকা উচিত। একটি তো বাংলা একাডেমির বিপরীতে জয়কালী মন্দিরের পথ, সেটি ঠিকই থাকবে। অন্য দু’টি থাকা উচিত সোহরাওয়ার্দী মাঠে মেলা বাউন্ডারির উত্তর ও পূর্ব দিকে। যাতে, ছবির হাট-টিএসটি-রাজু ভাস্কর্য এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট হয়ে এসে সহজে মেলায় ঢোকা যায়। শাহবাগ কিংবা মৎস ভবনের দিক থেকে এসে বাংলা একাডেমি পর্যন্ত দীর্ঘ পথ হেঁটে মেলায় ঢুকলেই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে আর অন্য দিক দিয়ে ঢুকলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, এটা কেমন কথা? নিরাপত্তাই যদি প্রবেশ পথ কম রাখার প্রধান যুক্তি হয়ে থাকে তাহলে উল্লেখিত অতিরিক্ত দু’টি পথে মেটাল ডিটেকটার এবং নিরাপত্তা রক্ষী বসিয়েই তো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। তা না করে, সাধারণ ক্রেতা পাঠককে দুনিয়া-ঘুরিয়ে একটা নির্দিষ্ট পথ ধরে মেলায় ঢুকতে বাধ্য করা হচ্ছে কি কারণে? আর কদিন পরই শুরু হবে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭। চাইলে এই সময়ের মধ্যে অনেক কিছুই সমাধান করা সম্ভব। প্রথম দিন থেকেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম বসিয়ে সাধারণ ক্রেতা পাঠককে সহজে মেলায় ঢোকার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অন্ততঃ তিনটি প্রবেশ পথ রাখা হোক।এমআরএম/জেআইএম

Advertisement