চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ, গ্যাস সংযোগ বন্ধ, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যার কারণে দেশের আবাসন খাতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর এসব সমস্যা থেকে উত্তোরণে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চেয়েছে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ সংগঠন রিহ্যাব।সম্প্রতি রিহ্যাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে তাদের বাজেট প্রস্তাবে দিয়েছে। প্রস্তাবে এ দাবি জানানো হয়। রিহ্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।প্রস্তাবে ৬ নাম্বার দাবিতে রিহ্যাব, হাউজিং লোন নামে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিলের দাবি জানিয়েছে। এই তহবিল থেকে ঢাকা শহরের আশে-পাশে বা মিউনিসিপ্যাল এলাকায় ১৫০০ বর্গফুট বা তার চেয়ে ছোট ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান প্রয়োজন।রিহ্যাব বলছে, এ ধরনের তহবিল গঠন করা গেলে এ খাতের মন্দা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভাব হবে।এদিকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরো দাবি করা হচ্ছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের আবাসন খাতের ক্ষতি আড়াই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে চলছে কর্তকর্তা ও শ্রমিক ছাটাই। গত আড়াই মাসে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০ শতাংশ জনশক্তি কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আবাসন কোম্পানিগুলোর নতুন প্রকল্প গ্রহণ শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ সংগঠন রিহ্যাব সরকারের কাছে আগামী বাজেটে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল চেয়েছে। যেখান থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন।রিহ্যাব সূত্র জনায়, গত ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭০০ কোটি টাকার একটি তহবিলের মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্যবিত্তরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে পারতেন। ২০১০ সালে ওই ফান্ড বন্ধ হয়ে যায়।বিহ্যাবের তথ্য মতে, সরকার বিরোধী জোটের ডাকে টানা আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধে দেশের অন্যান্য ব্যবসায়িক খাতের মতই আবাসন খাত ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। ফলে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য দেশের অভ্যন্তরে পরিবহন কঠিন হয়ে পড়েছে। যার ফলে নির্মাণাধীন অনেক প্রকল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নতুন কোনো প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না উদ্যোক্তারা। ফলে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। এমনকি আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাঁটাই হয়েছে ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ।রিহ্যাবের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতে প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ছাঁটাই হয়েছে ১৫-২০ শতাংশ। দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে ৩০-৩৫ শতাংশ। এছাড়া এই খাতে কাজের পরিধি কমে যাওয়ায় গ্রাম থেকে আসা খন্ডকালিন শ্রমিকের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ।এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এ শিল্পে প্রবাসীদের রেমিটেন্সের প্রাবাহ ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। সে কারণে এক দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাসন খাত। অন্যদিকে, রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা কমছে। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা অর্থনীতি।রিহ্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরে রিহ্যাবের নতুন সদস্য যুক্ত হওয়ার সংখ্যা ধারবাহিকভাবে কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে রিহ্যাবের নতুন সদস্য হয়েছিল ২৮২টি প্রতিষ্ঠান, সেখানে ২০১৪ সালে নতুন সদস্য হয়েছে মাত্র ৪৮টি প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে ১৭৭টি, ২০১২ সালে ১০১টি এবং ২০১৩ সালে ৮৬টি প্রতিষ্ঠান রিহ্যাবের সদস্য হয়েছে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় এ খাতের ব্যবসার পরিস্থিতি কেমন।এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগীতা চায় এ খাতের সংশ্লিষ্টরা। আর সে কারণেই আগামী বাজেটে বিশেষ তহবিল ছাড়াও আরো বেশি কিছু দাবি আদায়ের জোর প্রস্তুতি চলছে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবক রিহ্যাবে।এসআই/আরএস/পিআর
Advertisement