বিশেষ প্রতিবেদন

সার্চ কমিটি : আওয়ামী লীগের হ্যাঁ বিএনপির না

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির সদ্য গঠিত সার্চ কমিটিকে না বলে দিয়েছে বিএনপি। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে ভালো কমিটি হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটাও বলছে, সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়টি ছিল  রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি যেটা করেছেন তা সবার মেনে নেয়া উচিত।রাষ্ট্রপতির গঠন করা সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি শুধু হতাশই নয়, ক্ষুব্ধও। সার্চ কমিটি গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম দেয়ার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। এ কমিটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো নাম প্রস্তাব করা হয়নি। তিনি বলেন, কাকে কাকে তিনি (রাষ্ট্রপতি) মনোনয়ন দেবেন, সেটা তো একান্তই রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। আমরা কোনো নাম দেইনি এবং এটাও প্রত্যাশা করছি না যে, আমাদের দলীয় কোনো ব্যক্তি এই সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ জাগো নিউজকে বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি যাদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন তাদের প্রত্যেকের স্ব স্ব স্থানে সুনাম রয়েছে। এ কারণেই তারা এতদূর আসতে পেরেছেন। সমাজের স্বনামধন্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কমিটি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সহায়ক হবে। সব মিলে সার্চ কমিটি ভালো হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বিএনপি সবসময় নেতিবাচক রাজনীতি করে। এ কারণে কোনো নামই তাদের পছন্দ হবে না। তারা চাচ্ছে যেকোনো বিষয় নিয়ে একটি ইস্যু তৈরি করতে। যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা চালাচালি করে কোনো  লাভ হবে না। তাদের রাষ্ট্রপতির ওপর ভরসা রাখা উচিত। এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি আওয়ামী লীগের পছন্দের কমিটি। একটি সুষ্ঠু সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে বের করে আনার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল রাষ্ট্রপতি সে উদ্যোগ গ্রহণ করলেন না। তিনি বলেন, এই সার্চ কমিটি কী ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করবে তা আমরা এখনই বুঝতে পারছি। সুতরাং জাতিকে আবার আরেকটি অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া হলো। আমাদের দুর্ভাগ্য আজ পর্যন্ত একবারের জন্যও এই সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখলাম না। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও মির্জা ফখরুল ইসলামের সুরে সুর মিলিয়ে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটিতে আছেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।গত বছরের ১৯ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালী করার বিষয়ে একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাতে সার্চ কমিটির এ প্রস্তাবটি ছিল। গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে গিয়ে বিএনপি তাদের প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছিল। বিএনপি তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাছাই কমিটি করার জন্য ১০টি নামও রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছিল বলে দলটির সূত্র জানায়।তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বাছাই কমিটি হবে পাঁচ সদস্যের। বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে), যাকে নিয়ে বিতর্ক নেই এবং অবসরের পর সরকারের কোনো লাভজনক পদে ছিলেন না। আর অন্য সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দলনিরপেক্ষ একজন সচিব (তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন কোনো কর্মকর্তা বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না)। অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দলনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, যিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে সুখ্যাত এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় দলনিরপেক্ষ একজন সৎ, দক্ষ ও যোগ্য জ্যেষ্ঠ নারী। এ প্রস্তাব আমলে না নেয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ  বিএনপি।এফএইচএস/ওআর/আরআইপি

Advertisement