অর্থনীতি

বেসিক ব্যাংক দুর্নীতিতে জড়িত ২৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে ২৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ১৩ জনকে। সাতজনের বিরুদ্ধে গঠন করা হয়েছে অভিযোগ। আর পাঁচ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে আসামি করে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে দু’জনকে।ব্যাংকের আর্থিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত সংক্রান্ত বেসিক ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।তবে এ ব্যাংকের সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মূল হোতা সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করে বলা হয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সাবেক এমডি ও ডিএমডিকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং গ্রেফতার না করার বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করা হয়। কার্যবিবরণীটি সংসদীয় কমিটি থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, তাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বা উচিত সেগুলো নিতে হবে। তাদের অপরাধ তদন্ত ও খোঁজখবর নিতে বেসিক ব্যাংকের নতুন পরিচালনা বোর্ডকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুধু চাকরি থেকে বাদ দিলে হবে না। যেসব অন্যায় করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্থায়ী কমিটির কার্যবিবরণীতে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সেখানে চেয়ারম্যান বলেছেন, বেসিক ব্যাংকসংক্রান্ত গত পাঁচ বছরে যা ঘটেছে তা সবারই জানা। তবে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সবাই ভালো। গত দিনে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা চলছে।কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, নতুন পরিচালনা পর্ষদ ও চেয়ারম্যান আসার পর ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি আগের তুলনায় কমেছে। ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ টাকা বেরিয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অনিয়মিত ঋণের পরিমাণ কমেছে। নিয়মবহির্ভূত ঋণ যারা নিয়েছে, যারা দিয়েছে তাদের ধরতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়। এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বেসিক ব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, জালজালিয়াতি এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিভাগীয় তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।সেখানে বলা হয়, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আটজন কর্মকর্তাকে সাময়িক এবং পাঁচজনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক বরখাস্তকৃতদের মধ্য থেকে দু’জনকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।এছাড়া জাল সনদ দেয়ার অপরাধে পাঁচ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে জানুয়ারিতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। একই অপরাধে জড়িত থাকায় আরও সাত কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে সাতজন নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনুপস্থিত থাকার কারণে গার্ড-কমিউনিকেশন ম্যানেজার মো. আরাফাত রহমান নাফি ও মো. আল ইমরান মোল্লা এবং সহকারী অফিসার মো. কামরুল হাসান খানকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। জাল সনদ জালিয়াতির অভিযোগে সহকারী অফিসার (ক্যাশ) অনিকা হাসানকে চাকরি থেকে অবসান করা হয়। প্রশাসনিক অনিয়মের কারণে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ মোনায়েম খান, জেনারেল ম্যানেজার মো. জয়নুল আবেদিন চৌধুরী, খন্দকার শামিম হাসান ও মোহাম্মদ আলী, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শিপার আহমেদ, মো. মুশফিকুর রহমান চৌধুরী, ডেপুটি ম্যানেজার এসএম জাহিদ হাসান, এএম ওয়ালিউল্লা, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার নিলটপাল সরকারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং নিয়মাচার কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালকও এ-সংক্রান্ত নিয়মাচার পরিপালনে বদ্ধপরিকর।উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের সুনামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেসিক ব্যাংক ২০০৯ সালে ৯টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ৪৫৬ কোটি, ২০১০ সালে ৮টি একক প্রতিষ্ঠানকে ৪৯৫ কোটি, ২০১১ সালে ১২টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ৮৮১ কোটি ও ২০১২ সালে ২৩টি একক ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ২৩০৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাণিজ্যিক এই ব্যাংকে ২০০৯ সালে ফান্ডেড ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫৬ কোটি টাকা, কিন্তু ২০১৩ সালে এটি দাঁড়িয়েছে ২৩০৫ কোটি টাকা। এটি ২০০৯ সালের তুলনায় ৫ গুণের বেশি। সূত্র : যুগান্তরবিএ/আরআইপি

Advertisement