অমর একুশে বইমেলা ২০১৭ তে প্রকাশ হচ্ছে তরুণ কবি শামস আরেফিনের কাব্যগ্রন্থ ‘নবজাতক স্বপ্নরা’। প্রকাশিতব্য এ গ্রন্থ থেকে চারটি কবিতা পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো-মনমন তুমি জৈষ্ঠ্যের খরতাপে বিরহী মরুভূমি হয়ে গেছোবর্ষায় স্নান করে সতেজ হও আরেকবারতোমাকে খুঁজে জোছনার শীতল পাটি হারায় হতাশার বনেতাই দ্বিতীয়বার জন্ম নেয়ার আগে সূর্যমুখী হওযার মেরুদণ্ডের সামনে মাথা নত করে আলোর গতিযাকে ঘিরে মৌমাছি ও টিয়ের সুর বাতাস নাচায়যাকে তুমি তপ্তদুপুর বলো; সেও শ্রান্ত হয়ে তোমার তালপাখায় তৃপ্ত হতে চায়।অর্ধ ফোটা শাপলার মুচকি হেসে কতোকাল মোচড়াবে হৃদয়মানবতার পাঠশালায় এবার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করোপ্রেমকানা কাঠঠোকরা হয়ে বিরহ খুঁড়ে বেদনা এনো নাবাতাবি-দেহের ঘ্রাণে উসকে প্রেমমন্দায় আক্রান্ত আবেগ তাই তুমি লাইলি হও।তোমায় দেখে মজনু-ভালোবাসা ম্যাচের কাঠির মতো ছড়াক প্রেমমন তুমি এবার মানুষ হয়ে ওঠো—কারণ, মানুষের জন্য মানুষ হওয়ার মতো কঠিন কাজ আর নেই। ****দু’ফোঁটা ভালোবাসা দেকাঁচা হলুদ দেহ তোর মুখ যেনো পেঁপের মতো মসৃণতোর ঘ্রাণ শুঁকেশুঁকে বুঁদ হয়ে আছে দুপুরের রোদসে আমাকে পোড়ায় ঈর্ষায় পোড়া সতীনের মতোতবু কি ভুলতে পারি লিপস্টিক খসা দুই ঠোঁট?এই হৃদয় বন্ধক রাখি যে হাসির বিনিময়েজানে না সে বিরহের ঋতু এলে শান্ত হতে হয়— ভালোবাসার কুঁড়েঘরে বেদনার তালা যেন না লাগে।সখি, তোর প্রেমে আজ কবি নিজেই কানামাছিযে হাতড়ে বেড়ায় হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ও স্বপ্ন—ফকিরের ভাঙা থালে যদি দু’পয়সা দিতে পারিসতবে প্রেমিকের ভাঙা মনে দু’ফোঁটা ভালোবাসা দে।****সুখপাপ খরচ করে নেককার হওয়ার মতো সততা নেইতাই শরাবান তহুরা ভেবে প্রেম-পেয়ালা চুমুক দেই কাজল চাহনিতে বিকাই যেহেতু সার্বভৌম বেদনারেক্ষণিকের মাদকী মোহে সংসারি ভাব না হয়ে পারে। ঠোঁটে ঠোঁটে রাখার মতো সাহস নেই যে হরিণ শাবকেসেও সাহসী শরাহত কেলিরত একজোড়া পাখি দেখেশীতের অনাহুত বৃষ্টির মতো জীবন বিরহে কাঁদেঝিনুকের একবুক আবেগী দানা তাই মুক্তা হয় নাঅবসর প্রেমে বগুড়ার দইয়ে দেখো সর বসে নাবেদনার বালুচরে স্বপ্নরা কাছিমের মতো বাসা বাঁধেসাময়িক ভালোলাগা যেমন সীমাবদ্ধ থাকে দৃষ্টিতেসবুজ ও কোমল হয় না কংক্রিট আবেগ যাতে।মফস্বল মন আমার ছলনা শেখেনি কোনো কালেঅকর্ষিত ভূমিতে কোনোদিন ভুল করে না লাঙলেচাষোপযোগী কোনো মন পায় যদি রাখালি আবেগআবেগের সববেগ ঢেলে দিয়ে দেবে প্রেমের সেচসেই সেচে ঊর্বরা জমিন হবে যে মানবীর বুকতার মাঝে পরিযায়ী জীবন পাবে বাবুইয়ের সুখ। ****ভণিতা সেনবৃষ্টির নূপুরে নেচেনেচে ক্লান্ত আধাভেজা হে সুন্দরী মাছরাঙা বেদনার আনন্দ বিরহে কফিনস্থের পূর্বে তোমাকে দেখতে চাই স্যাঁতস্যাঁতে জীবনে হোঁচট খাওয়া কবি আজীবন তৃষ্ণার্ত কপোতির ডানায় উড়ে অনন্য শব্দনবী সাধারণ হবেই বিরহের ঠোঁটে চুমু দিয়ে স্বর্গের দরজা সিলগালা করবেআর ভুলে যাবে স্রষ্টা তাঁকে ব্যতিক্রম করেই সৃষ্টি করেছেনতবু সে কেনো ব্যতিক্রম না হয়ে হতাশ করছে স্রষ্টাকে?তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের পিপাসা মেটানো কাঙ্ক্ষিত কচি ডাব, প্রেমকুমারি কবির জন্য কাদামাটির মতো মন হওবিরহের শানকিতে পান্তা ভাতের মতো ক্লান্ত জীবন কবির বাকবাকুম স্বরে ভালোলাগার গান গাওয়া ডাহুক সে নয় হৃদয়ের হায়রোগ্লাফিকে লেখে কষ্টের ঐশীবাণীবাস্তবতার ধারাপাতে শেখে জীবন মানে বাঁচার আর্তনাদ।ভণিতা সেন আর নয়, সময়কে মৃৎশিল্পের মতো ক্ষণিক আনন্দের তুলিতে সাজানোএবার আশার আলপনায় স্বপ্ন সাজাও প্রেমহীন বিষাদ জীবন বউকথা কও পাখির মতো আকুতি না শোনার ভান করো নাতোমার ভণিতায় হৃদয় মরুঝড়ে তছনছ, ভূমিকম্পে ভেঙে চৌচিরজানো না, মন সে তো কাঁচের আত্মজা— যা ভাঙলে কখনো জোড়ে না!এসইউ/পিআর
Advertisement