দিনাজপুরের বিরল উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের একজন সফল নারী লুৎফা খাতুন। তিনি একাধারে একজন সফল গৃহিণী, একজন সফল মা ও একজন সফল নারী কৃষক।তার স্বামী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অবসর গ্রহণের পর থেকেই অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী। তিনি স্বামীর নিবিড় পরিচর্যার পাশাপাশি নিজেই পোল্ট্রি খামারে মুরগির ডিম সংগ্রহ, নিজস্ব মৌখামারে মধু আহরণ ও প্রায় ছয় একর জমিতে রোপণ করেছেন তিন শতাধিক লিচুগাছ এবং শতাধিক আমগাছ।লুৎফা খাতুন সফলতার সঙ্গে তাদের তিন ছেলে ও চার মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। বড় ছেলে কাজিপাড়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (বিএসসি), মেজ ছেলে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, ছোট ছেলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন, বড় ও সেজ মেয়ে গৃহিণী। এছাড়াও মেজ মেয়ে বিরল দারুস সুন্নাত আলিম মাদরাসার কম্পিউটার শিক্ষক ও ছোট মেয়ে এমএ পাশ করে চাকরি প্রত্যাশী।লুৎফা খাতুন লিচু বাগান থেকে বার্ষিক সাত লক্ষাধিক টাকা, আম বাগান থেকে বার্ষিক অর্ধলক্ষাধিক টাকা, মৌচাষ থেকে লিচু ও সরিষা মৌসুমে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করে বার্ষিক প্রায় ৬৫ হাজার টাকা আয় করেন। এছাড়াও পোল্ট্রি খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ছেলে মেয়েরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে তিনি নিজেও কৃষিকাজে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছেন। তার এই অভূতপূর্ব সাফল্য দেখে এলাকার অন্যান্য নারীরা তাকে মডেল হিসাবে গ্রহণ করে কৃষি কাজে ঝুঁকছেন।লুৎফা খাতুন জানান, তার বাবা মরহুম নূরুল ইসলাম একজন সফল কৃষক ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তিনি কাজিপাড়া গ্রামে আধুনিক চাষাবাদে এলাকায় সুনাম অর্জন করেছিলেন। এ জন্য তার বাবা ১৭ মার্চ ১৯৭৫ তারিখে তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ কর্তৃক বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ১৯৭৪ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। লুৎফা খাতুন তার বাবার সেই বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন বলে জানান।উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আশরাফুল আলম জানান, লুৎফা খাতুনকে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ হতে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। তিনি লিচু বা আম বাগানে কখন কোন সময়ে কীভাবে পরিচর্যা করতে হয় এবং উন্নত পদ্ধতিতে কীভাবে অধিক উৎপাদন করা যায় এ সব বিষয়ে বেশ আগ্রহী। আরএআর/এমএস
Advertisement