আন্তর্জাতিক

আমিরাতে এক বাংলাদেশি পরিবারের অসহায়ত্ব

মোহাম্মদ নুর আহমদ প্রায় চার দশক ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করে আসছেন। এই দেশটিকে তিনি নিজের বাড়ির মতো মনে করেন। ৩৭ বছর আগে আমিরাতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। দীর্ঘসময় ধরে সেদেশে থাকলেও সম্প্রতি চাকরি হারিয়ে তিনি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এর ওপর যোগ হয়েছে পরিবারের সদস্যদের অসুস্থ্যতা। এতকিছুর পরও আমিরাতে থাকতে চান তিনি; পরিবারকে আবারো সহায়তার সুযোগ চান এই বাংলাদেশি। আহমদ গালফ নিউজকে বলেন, ‘আমি এখানে অনেক মূল্যবান দক্ষতা অর্জন করেছি এবং অনেক ভালোবাসা ও আতিথেয়তা পেয়েছি। যেমন, আমার প্রথম পৃষ্ঠপোষক আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে একটি অ্যাকুয়ারিয়ামে মাছের যত্ন নেয়া, খাওয়ানো ও দেখাশুনা করতে হয়। এই দক্ষতার কারণে আমি একটি সরকারি চাকরি পেয়েছিলাম; যেখানে আমি এই কাজ করেছিলাম।’৫২ বছর বয়সী এই প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের মানুষের ভালোবাসা ও আতিথেয়তা অতুলনীয়।’৫ বছর আগে সরকারি চাকরি হারানোর পর একটি মুদির দোকান দিয়েছিলেন আহমদ। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি বন্ধ করতে বাধ্য হন তিনি। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় তার আয়ের পথ। বন্ধ হয়ে যায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সহায়তার পথও। আহমদ বলেন, আমরা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়ে যাই; যখন আমার স্ত্রীর কিডনি বৈকল্য ধরা পড়ে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার তাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। আমাদের ভয়ানক এই পরিস্থিতির সময় চিকিৎসক বলেন, ব্যয়বহন করতে না পারলেও সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার তাকে ডায়লাইসিস করাতে হবে। পরে এক সহকর্মী এগিয়ে আসেন আহমদের পরিবারকে সহায়তা করতে; যাতে তারা আমিরাতে বসবাস করতে পারেন। দিনের পর দিন তারা সেখানে থাকছেন; কিন্তু কীভাবে অর্থের জোগান হবে সেবিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি।মোহাম্মদ নুর আহমদ বলেন, ‘ডায়ালাইসিসের সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকবার ডায়ালাইসিসের সময় এক হাজার ৩০০ দিরহাম আমিরাতি দিনার প্রয়োজন হয়। এখানে আমি যে উদারতা দেখেছি তা অ্যন কোথাও পাইনি। এজন্য আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ।’বন্ধু ও আমিরাতের স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তাই এখন একমাত্র ভরসা আহমদের পরিবারের। স্ত্রীকে বাংলাদেশে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে পারেননি তিনি। রক্তে হেমোগ্লোবিনের পরিমাণ এতই কম যে বিমানে করে দেশে নিয়ে আসাও ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আহমদ বলেন, রক্তে হেমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণে স্ত্রীকে বাংলাদেশে নিতে পারি না। এছাড়া আমাদের বাড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের চট্টগ্রামে, যেখান থেকে স্ত্রীকে ডায়ালাইসিস দেয়ার জন্য যে হাসপাতালে নেয়া হবে তার দূরত্ব কমপক্ষে দুই ঘণ্টার পথ। নিয়মিত হাসপাতালে নিলে তার শারীরিক অসুস্থ্যতা আরো খারাপ হবে।আহমদ প্রাপ্তবয়স্ক দুই ছেলে রয়েছে; ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তারা চাকরি নিতে পারছেন না। পারিবারিক এ ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি আরো একটি বিপদের মুখে পড়েছেন আহমদ। সম্প্রতি তিনি সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ঘাড়ের বামদিকে আঘাত পান। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য বিল দিতে হয় আড়াই হাজার দিরহাম। তিনি বলেন, ‘অতীতে প্রতিবেশি দেশে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমিরাত ছাড়তে হবে তা আমি সহ্য করতে পারবো না ভেবে যাই নাই। এখানে থেকে পরিবারকে সহায়তা করতে সক্ষম হবেন বলে স্বপ্ন দেখলেও একদিন তা সত্য হবে বলে বিশ্বাস আহমদের।’এসআইএস/আরআইপি

Advertisement