উচ্ছেদ পরবর্তী ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে ৫২ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এসব কর্মীদের ‘স্বেচ্ছাসেবক’ হিসেবে নিয়োগ দেন। দক্ষিণ সিটির মতিঝিল, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাইতুল মোকাররম ও দিলকুশা এলাকায় তারা দায়িত্ব পালন করবেন।দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর জনসাধারণের চলাচলের ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা করে আসছে হকাররা। কর্তৃপক্ষের কাছে ফুটপাতগুলো যেন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার উচ্ছেদ অভিযান ও হলিডে মার্কেট চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও কোনোভাবেই ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করা যাচ্ছে না। উচ্ছেদ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হকার ও লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের হামলার শিকারও হয়েছেন নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেসামাল হকারদের লাগাম টেনে ধরতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে হকার নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়।পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য হকার তালিকা, হলিডে (ছুটির দিন) মার্কেট এবং নির্দিষ্ট সময়ে ফুটপাতে হকার বসতে দেয়াসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট না হকাররা। তারা ফুটপাত দখল শেষে নগরীর রাস্তাও দখল করতে থাকেন। এ অবস্থায় হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় সিটি কর্পোরেশন। সর্বশেষ নগরীর ফুটপাত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার উদ্যোগ নেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ বিষয়ে গত ১১ জানুয়ারি হকার নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সড়কে হকার বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৪ জানুয়ারি থেকে যদি হকাররা ফুটপাত না ছাড়ে তাহলে ১৫ জানুয়ারি থেকে উচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া হয়। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে হকারদের জন্য ৫টি স্থানে হলিডে মার্কেট চালু করা হয়।কিন্তু কর্পোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের পরও ফুটপাত থেকে কোনোভাবেই হকার সরানো যাচ্ছিলো না। এরপর ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারি (রোববার) থেকে টানা চারদিন ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি কর্পোরেশন। এ সময় পুলিশ সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করে। এরপরও বিভিন্ন সময় সুযোগ বুঝে ফুটপাতে বসে পড়েন হকাররা। ফুটপাত পাহারায় সার্বক্ষণিক পুলিশ ফোর্স না পেয়ে এবার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।রোববার সকাল থেকে এসব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। সবার গায়ে ট্রাফিক ড্রেস ও হাতে একটি প্লাস্টিকের লাঠি দেয়া হয়েছে। ফুটপাতে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতির ফলে কোনো হকার বসতে দেখা যায়নি। প্রথম অবস্থায় চারটি স্থানে ৫২ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়।সিটি কর্পোরেশনের জারি করা ওই অফিস আদেশে দেখা গেছে, প্রাথমিক অবস্থায় যে চারটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ১) মতিঝিল ব্যাংকপাড়া থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে পল্টন পর্যন্ত, জিরো পয়েন্ট, জিপিও এবং বায়তুল মোকাররম, ২) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড (সুন্দরবন মার্কেট) এবং নবাবপুর মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইট ৩) দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা ও বঙ্গভবনের উত্তর পাশ এবং ৪) গোলাপশাহ মাজার হতে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট। ডিএসসিসি সূত্রে জানাগেছে এ চারটি এলাকায় ১০ জন করে মোট ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন। সম্পত্তি বিভাগের চারজন সার্ভেয়ার চারটি টিমে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দু’জন করে সহযোগী হিসেবে চেইনম্যান দায়িত্ব পালন করবে। এ চারটি স্থানে সর্বমোট ৫২ জন দায়িত্ব পালন করবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন।এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী (উপ-সচিব) জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেদখল হয়ে যাওয়ায় নগরীর ফুটপাতে হাঁটা যায় না। জনগণের পথ তাদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে ডিএসসিসি মেয়র বদ্ধপরিকর। আমরা বহুবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু অভিযান শেষে ফুটপাত প্রতিবারই হকারদের দখলে চলে যায়। তাই এখন থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা ফুটপাত পাহারা দেবে, যাতে কোনো হকার সরকারি অফিস চলাকালীন দখল করতে না পারে।এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফুটপাত জনগণের সম্পদ। এটি উদ্ধারে উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। ফুটপাত দখলে যত বড় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাশালী ব্যক্তি হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমার চেষ্টা আছে, ফুটপাত দখল মুক্ত রাখবো।’ এমএসএস/ওআর/এমএমজেড/এমএস
Advertisement