প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিনটা আমাদের ভালোই গেলো। এই সফরে সম্ভবত এই প্রথম বোলারদের কাছ থেকে ভালো বোলিং দেখলাম। দিনের শুরু থেকেই পেসার তাসকিন আর স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দুই দিক থেকে বলতে গেছে দারুণ চাপের মধ্যে রেখেছিল স্বাগতিকদের। কিছু বাজে ফিল্ডিং না হলে, নিশ্চিত এই দিনটা আমাদের জন্য আরও স্মরনীয় হয়ে থাকতো।প্রথম থেকেই আমি বলে এসেছি ফিল্ডিংয়ের কথা। তিন-চারটি নিশ্চিত ক্যাচ আমরা মিস করে ফেলেছি। এই মিসগুলোর খেসারতই শেষ পর্যন্ত আমাদেরকে দিতে হয়। আপনি ব্যাটিং-বোলিং যতই ভালো করুন না কেন, ফিল্ডিং যদি নড়বড়ে হয়, তাহলে কোনোভাবেই ভালো করার সম্ভাবনা থাকে না। একটা ম্যাচে ভালো করতে হলে তিনটা ডিপার্টমেন্টেই এক সঙ্গে ভালো করতে হবে। দুইটা ভালো, অন্য একটাতে খারাপ করলেও মোটের ওপর ফলাফলেই সেটার প্রভাব পড়বে। আমাদের ব্যাটিং যা হয়েছে, সেটাকে হয়তো পুষিয়ে দিচ্ছিলো বোলাররা; কিন্তু বাজে ফিল্ডিং আর বেশ কয়েকটা ক্যাচ ছাড়ার কারণে নিউজিল্যান্ডকে যতটুকু চেপে ধরার কথা আমাদের সেটা পারিনি। তাসকিনের বলে শুরুতেই দেখলাম স্লিপে ক্যাচ উঠলো ওপেনার জিত রাভালের। সেই ক্যাচটা যদি হাতছাড়া না হতো, তাহলে শুরুতেই উইকেট এবং একটা মানসিক চাপে পড়ে যেতো নিউজিল্যান্ড।তাসকিন, রুবেল, রাব্বি, মিরাজ কিংবা সাকিব- এরা দারুণ বোলিং করেছে। অনেকদিন পর বোলারদের মধ্যে একটা ইউনিটি লক্ষ্য করলাম। কেউ ছেড়ে কথা বলেনি নিউজিল্যান্ডদের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে। শেষ দিকে সাকিব তো চমকই দেখিয়ে দিলো। শেষ বিকালটা রঙ্গিন হয়েছে তার কারণেই। যদিও একটা বিষয় আমাকে খুব অবাক করেছে। সাকিবকে বোলিংয়ে এত দেরিতে কেন আনা হলো!সবাই জানে সাকিব বিশ্বমানের বোলার। তাকে বোলিংয়ে আনা হলে সব ব্যাটসম্যানই চাপে থাকে। সকালে তার বোলিংটা কার্যকরিও হয়তো হতে পারতো। কিন্তু আমরা তাকে বোলিংয়ে দেখতে পেলাম লাঞ্চের পর ৩০তম ওভারে। ওয়েলিংটন টেস্টেও দেখেছি, বোলার পরিচালনটা ছিল খুবই বাজে। এই টেস্টেও দেখছি, তামিমের বোলিং পরিচালনাটা মোটেও সঠিক নয়। তার বোলিং পরিচালনা প্রশ্নবিদ্ধ।তবুও এই টেস্টে কিন্তু আমাদেরকে বোলাররাই ম্যাচে ফিরিয়েছে। প্রথম দিন ব্যাটিংয়ে যে দুর্বলতা আমরা দেখিয়েছি, সেখান থেকে বোলাররাই বের করে এনেছে। সাকিব দারুণ বোলিং করেছে। ব্যাট হাতে নিজেকে প্রমাণের পাশাপাশি বল হাতেও দলের হয়ে সেরা পারফরমার নিঃসন্দেহে সাকিব। সেটা আবারও প্রমাণ করলো সে এই টেস্টে। শেষ দিকে তার দ্রুত তিন উইকেটই কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। আমাদের খেলায় ফিরিয়ে দিয়েছে। যে কারণে এখন বলতে পারি, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ড সমান সমান। তৃতীয় দিন সকালটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ডের আরও তিন উইকেট বাকি রয়েছে। উইকেটে রয়েছেন একজন সেট ব্যাটসম্যান। কাল সকালে তাদেরকে কোনোভাবেই জুটি গড়তে দেয়া যাবে না। যদি খুব দ্রুত নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে দিতে পারি এবং দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা অন্তত ৫টি সেশন ব্যাটিং করতে পারে বাংলাদেশ, তাহলে আমাদেরই এই ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।প্রথম ইনিংসে যেভাবে আমরা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেছি, সেভাবে যদি দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং করি, তাহলে কোনোভাবেই জয়ের সম্ভাবনা তো থাকবেই না, বরং আমরা নিউজিল্যান্ডকেই সুযোগ তৈরি করে দেবো। সুতরাং, আমাদেরকে সময় নিয়ে ব্যাট করতে হবে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না। পাঁচটি সেশন ব্যাট করতে পারলে অন্তত আমরা ৩৫০-এর মত লক্ষ্য তৈরি করে দিতে পারবো তাদের সামনে।আমরাদের জন্য আরেকটা সুবিধাজনক দিক হলো, চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে তাদেরকেই। সুতরাং, প্রথম ইনিংসের মত দ্বিতীয় ইনিংসেও বোলারদের একইভাবে ভালো বোলিং করতে হবে এবং একই সঙ্গে ফিল্ডিংটাও ভালো করতে হবে। তাহলেই এই টেস্টে আমরা জয়ের আশা করতে পারি। যদিও সব কিছু এখন নির্ভর করছে দ্বিতীয় ইনিংসের ওপর। উইকেটে এমন কিছু নাই যে, ব্যাটসম্যানদের ভয় পেতে হবে। একটু সাহস নিয়ে টিকে থাকার মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে পারলেই সফরের হয়তো শেষ ম্যাচটায় আমারা একটা স্বস্তির জয় নিয়ে দেশে ফিরতে পারবো। সে শুভ কামনা রইলো দলের ক্রিকেটারদের প্রতি।আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement