সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার ও জিম্মি করে নির্যাতনের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের সঙ্গে জড়িত সংঘবদ্ধ পাচারচক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেফতার ও ১২ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রোববার দিনভর টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রুবেল, শহিদুল ইসলাম ও মো.শওকত এবং আবু মোহাম্মদ, পিন্টু, আনোয়ার, মাহমুদুল, হামিদুল হক ও ইউনুছ।র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।তিনি বলেন, আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুকে গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আবু মোহাম্মদ ও পিন্টুর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী যারা চট্টগ্রাম আসেন তাদের তারা গ্রহণ করেন। এরপর টেকনাফে অবস্থানকারী আনোয়ারের মাধ্যমে সবাইকে টেকনাফ পাঠান।এই চক্রের অন্যতম মূলহোতা ইউনুস র্যাবকে জানিয়েছে, কক্সবাজারের শাহ পরীর দ্বীপ কালাম ও আলী এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী জিয়ার মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠিয়ে থাকেন।মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, লোক ট্রলারে উঠিয়ে দেয়ার পর তারা টাকা নিয়ে থাকে। লোক মরে গেলেতো টাকা আদায় করা যাবে না। সাগরপথে কে বাঁচবে, কে মরবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ট্রলারে থাকা মোবাইল ফোনে মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের মারধর করে কান্নার শব্দ শুনিয়ে টাকা আদায় করা হতো।মালয়েশিয়া লোক পাঠানোর বিষয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রথমে শহিদুল ও রুবেলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক সংগ্রহ করেন। এরপর শওকত লোকগুলো টাঙ্গাইলে জমায়েত করে টাঙ্গাইল থেকে চট্টগ্রাম হয়ে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে পাঠায়। সাধারণ নিরীহ লোককে বিনা পয়সায় মালয়েশিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দালালের মাধ্যমে লোক সংগ্রহ করে। এরপর টেকনাফ থেকে ধাপে ধাপে তাদের মালয়েশিয়াগামী মাছ ধরার ট্রলারে উঠায়। ট্রলারের উঠানোর পর থেকেই যাত্রীদের বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন ও অনাহারে যাত্রীদের মধ্যে কোন যাত্রী গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যুবরণ করলে তাদের সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়।তিনি আরও বলেন, মায়ানমার, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জলসীমায় ট্রলার পরিবর্তন করে তারা যাত্রী হস্তান্তর করেন। মালয়েশিয়া সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছার আগেই জীবিত সকল যাত্রী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন যাত্রীদের মানষিক দুর্বলতাকে পূজি করে দালালরা যাত্রীদের আত্মীয় স্বজনকে ফোন করে নির্যাতন, কান্নার আওয়াজ শুনিয়ে ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করতো। যে সকল যাত্রী টাকা দিতে অসমর্থ হয় তাদের উপর চলে অমানষিক নির্যাতন।র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান আরো জানান, গ্রেফতারকৃতদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই চক্রেল সাথে আরও কারা জড়িত তাদের খুজে বের করার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।জেইউ/আরএস/আরআই
Advertisement