খেলাধুলা

‘বাংলাদেশের ইনিংসটা আরও ভালো হতে পারতো’

‘রাব্বি ভাইয়ের সাপোর্ট দেখে আমি অবাক! সত্যি শেষ দিকে রাব্বি ভাই যে সাপোর্ট দিয়েছেন, তা দেখে খুব ভালো লেগেছে। তিনি ধৈর্য ধরে একদিন আগলে রেখেছেন অনেকক্ষণ। অনেকগুলো বলও খেলেছেন। তার ধৈর্য ধরে কিউই ফাস্ট বোলিং মোকাবিলা দেখে বার বার আফসোস হয়েছে, ইশ শেষ দিকে যদি তার সঙ্গে একজন স্বীকৃত বাটসম্যান থাকতো, তাহলে আমাদের খুব ভালো হতো। অনুশোচনা হচ্ছে, ইশ আমি যদি থাকতাম। আমার তো মনে হয়েছে রাব্বি ভাইয়ের সাপোর্ট পেলে একজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরিও করে ফেলতে পারতেন।’ ওপরের কথাগুলো সৌম্য সরকারের। খেলা শেষে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে এসে এক নিঃশ্বাসে ওপরে কথাগুলো বলে বসেন সৌম্য। সৌম্যর ঐ কথায় কামরুল ইসলাম রাব্বির ধৈর্যর প্রশংসা আছে। একজন পেসার হয়েও দলের বিপদে নিজে একদিক আগলে রাখার চেষ্টার বন্দনা গেয়েছেন। আবার আফসোস-অনুশোচনাও ছিল, ইশ একজন ব্যাটসম্যান এমন সঙ্গী পেলে হয়তো সেঞ্চুরিই করে ফেলতে পারতেন। এই কথা বার্তায় কিছু বার্তাও আছে। যে কথা সৌম্যর একার না। সবার।   এখন প্রশ্ন উঠেছে কামরুল ইসলাম রাব্বি পেসার হয়ে যদি ১০ নম্বরে নেমে ৬৩ বল খেলে ফেলতে পারেন, তাহলে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা কি করলেন? ঐ দীর্ঘ সময় উইকেটে কাটিয়ে রাব্বি রান করেছেন মোটে ২ রান। তাতে সমস্যা নেই। তিনি কতগুলো বল খেলেছেন, সেটাই বড়। সত্যিই শেষ দিকে একজন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান থাকলে অবশ্যই রাব্বির ধৈর্য সংযমী ব্যাটিংটা কাজে লাগতো। তাহলে অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশের ইনিংস আজ শেষ হত না। স্কোরবোর্ডে যত রান জমা পড়েছে, তার চেয়ে অন্তত ৫০ রান বেশি থাকতো। এই না হবার আফসোস সবার। সন্দেহ নেই অধিনায়ক মুশফিক, ওপেনার ইমরুল ও টপ অর্ডারের অন্যতম ভরসা মুমিনুল ছাড়া ভাঙ্গাচোরা দল যা করেছে, সেটাও একদম ফেলে দেবার না। দিন শেষে রান ২৮৯। তারপরও আছে কিছু আফসোস আছে অনুশোচনা। হ্যাগলি ওভালে প্রথমদিন শেষে তামিমের দল যেখানে থেমেছে, সেখানে থামার কথা ছিল না। আরও সামনে যাওয়া উচিৎ ছিল। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন যাওয়া সম্ভব হয়নি। প্রথম কারণ অধিনায়ক তামিম, অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ আর আগের টেস্টে উভয় ইনিংসে ভালো খেলা সাব্বির রহমানের ব্যাট কথা না বলা। মুশফিক, ইমরুল ও মুমিনুল ছাড়া দল। কোথায় তাদের ভালো খেলার সর্বোচ্চ ইচ্ছে,আগ্রহ ও দৃঢ় সংকল্প থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে তাদের কি তা ছিল? তিনজনই আলগা হাতে খেলতে গিয়ে সাজঘরে। অধিনায়ক তামিম (৫) আবার লেগস্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে না দিয়ে তাড়া করতে গিয়ে অহেতুক নিজে উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ (১৯) বলের পিছনে না এসে দাঁড়িয়ে খেলার খেসারত দিলেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। সাব্বিরও (৭) দরকারের সময় চট জলদি ফিরে গেলেন। টিম সাউদির অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পিচ পড়ে বেড়িয়ে যাওয়া ডেলিভারিকে ব্যাটটাকে খানিক স্কোয়ারের দিকে রেখে খেলতে যাবার মাশুল দিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে আউট সাব্বির। এদের তিনজনের যে কোন একজন একটা পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেই স্কোর সোয়া তিনশোতে গিয়ে ঠেকতো। তবু রক্ষা, চরম সকটে দুই বাঁহাতি সৌম্য আর সাকিব হাল ধরেছিলেন। তাদের জুড়ে দেয়া ১২৫ রানের পার্টনারশিপে রান আড়াইশো পেড়িয়ে ৩০০`র দোরগোড়ায়। সৌম্য দুর্দান্ত খেলেছেন। সব্যসাচী সাকিব আরও একবার ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন প্রয়োজনীয় সময়। মাত্র ৩৮ রানে রানে দুই টপঅর্ডার তামিম আর মাহমুদউল্লাহ আউট হবার পর সাকিব ও সৌম্য হাল না ধরলে রান ২০০ হতো কিনা সন্দেহ। কিন্ত  সাকিব ও সৌম্য জুটিটা আর ঘন্টাখানেক বেশি সময় টিকলেই হয়ত দিন শেষে দৃশ্যপট অন্যরকম হতে পারতো। সৌম্য নিশ্চিত শতরান হাতছাড়া করেছেন একটু মনোযোগ-মনোসংযোগ হারিয়ে। খানিক থেমে আসা বলকে কভারে পুশ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন সৌম্য। তার প্রত্যাশার চেয়ে দেরিতে আসা বল চলে যায় শর্ট কভারে। সাকিব খেলছিলেন বীরের মত। শুরুতে স্লিপের মাথার ওপর দিয়ে চালিয়ে বেঁচে যাওয়া সাকিব সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেটের সামনে ও স্কোয়ারে কিছু অনিন্দ সুন্দর শট খেলেছেন। কিন্তু যখনই মনে হচ্ছিল ডাবল সেঞ্চুরি পর আবার সেঞ্চুরির পথে, ঠিক তখনই ছন্দপতন। অফস্টাম্পের আশপাশের ডেলিভারিগুলো স্বচ্ছন্দে খেলা সাকিব আউট হন লেগস্টাম্পের আশপাশে পিচ পড়ে আরও বেড়িয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে। ঐ ডাউন দ্যা লেগ কট ফ্লিক আর পুলের মাঝামাঝি শট খেলতে গিয়ে তামিমের পর উইকেট কীপারের গ্লাভসে ধরা পড়েছেন সাকিবও। ১৭৮ রানে ইনিংসের অর্ধেকটা খোয়া যাবার পর পুরো ইনিংসের সব দায় দায়িত্ব বর্তায় দুই অভিষেক হওয়া তরুণ নুরুল হাসান সোহান ও নাজমুল শান্তর হাতে। অভিষেকে কঠিন কন্ডিশনে কিউইদের ধারালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর প্রাণপন চেষ্টা করেন এ দুই তরুণ। সোহান মাঝেমধ্যে একটু দূর থেকে ব্যাট চালিয়ে দিলেও শান্ত খেলেছেন একজন জাত ব্যাটসম্যানের মত। এই জুটিতে যোগ হয়েছে আরও ৫৪ রান। টেস্ট জগতে পা রেখেই দেখেন সব ব্যাটসম্যান আউট। আমরাই দুজন শুধু বাকি। এমন কঠিন ও মানসিক চাপ সামলে সোহান ও শান্ত চেষ্টা করেছেন প্রাণপণ। তবে শান্তর ধীরস্থির ও আত্ববিশ্বাসী ইনিংসটির ইতি ঘটে সাউদির খানিক শর্ট অফলেন্থ থেকে একটু বাড়তি উচ্চতায় আসা ডেলিভারিকে স্কোয়ারে চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে শর্ট ব্যাকওয়াড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। বেশ অনেক্ষণ ক্রিজে থেকে নিজে ৮ রান করলেও আরেক অভিষিক্ত সোহানের সঙ্গে শান্তর গড়া ৫৪ রানের পার্টনারশিপ না হলে নির্ঘাত বাংলাদেশের ইনিংস গুড়িয়ে যেত আরও আগে। শান্ত আউট হবার পর সব দায় দায়িত্ব গিয়ে পড়ে নুরুল হাসান সোহানের হাতে। এ উইকেটরক্ষক কাম মিডল অর্ডার চেষ্টা করেছেন নিজে রান করতে ও দলকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু শেষ দিকে তিন বোলার তাসকিন , রুবেল ও রাব্বিকে সঙ্গী হিসেবে পাবার পর একটু হাত খুলে খেললে, তাদের কম স্ট্রাইক দেবার চিন্তায় ব্যাট করলে হয়তো আরও রানটা বাড়তো। কিন্তু সোহান তা করেননি। কেন করেননি? তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে শেষ দিকে তিন বোলারকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েও আগের মতই ধীরে সুস্থে ব্যাট চালাতে গিয়ে ভুল করে বসেন সোহান। এতে তার নিজের অভিষেকে ফিপটিটা হাত ছাড়া হয়েছে। আবার দলও কিছু বাড়তি রান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর সে কারণেই ১০ নম্বরে ক্রিজে যাওয়া কামরুল ইসলাম রাব্বির ৬৩ বলে ২ রান করার পরও ২৮৯ এ শেষ প্রথম ইনিংস। এআরবি/এমআর/পিআর

Advertisement