খেলাধুলা

ওপেনিংয়ে সামর্থ্য প্রমাণে মুখিয়ে ছিলাম : সৌম্য

যদিও তার প্রথম ওয়ানডে ফিফটি তিন নম্বর পজিশনে (গত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে; ৫১)। তারপরও সৌম্য সরকারের আসল জায়গা কিন্তু ওপেনিং। হয়তো একটু বেশি হাত খুলে খেলতে ভালোবাসেন। উইকেটের সামনে ও দু’দিকে ফ্রি স্ট্রোক খেলা তার অনেক বেশি পছন্দের। তারপরও এ বাঁহাতি প্রথাগত ওপেনার। নিজেকে ওপেনার হিসেবে ভাবতেই বেশি পছন্দ। শুধু যে ওপেনারে ভূমিকা বেশি পছন্দ তা নয়; ২০ ওয়ানডেতে তার যে পাঁচটি বড় ইনিংস আছে, তার সবচেয়ে বড় তিনটি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে। তার মধ্যে একমাত্র ওয়ানডে সেঞ্চুরি (২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল শেরেবাংলায়; ১২৭) ইনিংসের সূচনা করতে নেমেই। আরও দুটি বড় ইনিংস (২০১৫ সালের ১২ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে- ৮৮* এবং ১৫ জুলাই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে- ৯০) ওপেনার হিসেবে খেলতে নেমেই। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সৌম্যর তিন তিনটি ম্যাচ জেতানো বড় ইনিংসই কিন্তু পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো বড় দলের বিপক্ষে।তার অর্থ- বড় দলের বিপক্ষে ওপেন করতে নেমে ম্যাচ জেতানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তার। কিন্তু মাঝে একটু খারাপ সময় চলে আসায় অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। মাঝে তাকে ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টিতে কিছু ম্যাচ নীচের দিকে খেলানো হয়েছে। টেস্টে তার আবির্ভাবের আগে থেকেই তামিম-ইমরুল জুটি প্রতিষ্ঠিত। কাজেই তার জায়গা হয়েছে সাত নম্বরে। ২০১৫ সালের মে মাসে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকে সাত নম্বরে খেলতে নেমে দুই ইনিংসেই- ৩৩। পাকিস্তানিদের সাথে পরের টেস্টে একই পজিশনে নেমে সুবিধা করতে না পারা ১+৩। এরপর ২০১৫ সালের জুনে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ভারতের সাথে বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩৭ রান করলেও গত বছর ইংল্যঅন্ডের সাথে টেস্টে জায়গা পাননি। ১৫ জনের স্কোয়াডে থাকলেও ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে ১১ জনের বাইরেই থাকতে হয়। হয়তো ইমরুল কায়েস সুস্থ থাকলে ক্রাইস্টচার্চেও হয় বদলি ফিল্ডার হিসেবে ফিল্ডিং করা এবং পানি-গ্লাভস নিয়ে মাঝে মধ্যে মাঠে ঢোকা ছাড়া বেশির ভাগ সময় ড্রেসিং রুমেই কাটাতে হতো। ইমরুলের উরুর ইনজুরি এক কথায় তার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। যেহেতু সাব্বির রহমান। আগের টেস্টের দুই ইনিংসে অর্ধশতক উপহার দিয়েছেন, কাজেই সৌম্যকে সাতে না খেলিয়ে ওপেনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। আজ খেলা শেষে জানা গেল সৌম্য নিজেও অমন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। একটু নির্লিপ্ত ও অন্তর্মুখী স্বভাবের হলেও অাজ খেলা শেষে প্রেসের সামনে অবলীলায় বলে ফেলেছেন, ‘মূল লক্ষ্যই ছিল নিজেকে মেলে ধরা। সামর্থ্যের প্রমাণ রাখা। আমি টেস্টেও ওপেন করতে পারি। ওপেনিংই আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। এখানে ভালো খেলার সামর্থ্যও আমার আছে- তার প্রমাণ দিতেই আসলে মুখিয়ে ছিলাম। ভালো করতে সামর্থ্যের শতভাগ দিতে চেষ্টা করেছি। তারপরও যা হয়েছে, তাতে আমি সন্তুষ্ট না। আরও কষ্ট করে লম্বা ইনিংস খেলতে পারলে ভালো লাগতো। দলেরও উপকার হতো।’ হ্যা, শতরানের খুব কাছাকাছি চলেও গিয়েছিলেন। ৫২ রানে গ্র্যান্ডডোমের বলে স্লিপে জিত রাভালের ভুলে জীবন পাওয়ার পর যেভাবে খেলছিলেন, দেখে মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি না করে ফিরবেন না। একদম আস্থা ও আত্ববিশ্বাস নিয়ে খেলেছেন। উইকেটের সামনে ও কভারের আশপাশ দিয়ে ড্রাইভ খেলেছেন পাকা ব্যাটসম্যানের মতো। এ উইকেটে বলের লাইন গিয়ে পা বাড়িয়ে মাথা নীচু করে পুশ বা পাঞ্চ করলেই বল মাটি কামড়ে সীমানার আশপাশে চলে যাবে- এ সত্য উপলব্ধি করতে বেশি সময় লাগেনি। ৮৪ রানের প্রায় অর্ধেক ঐ জায়গায় ড্রাইভ খেলেই তুলে নিয়েছেন। কয়েকটি নজরকাড়া পুলও হাঁকিয়েছেন। স্বচ্ছন্দে ও সাবলীল ড্রাইভ খেলে ইনিংসের নৌকাকে সামনে এগিয়ে নেয়া সৌম্য আউটও হয়েছেন কভারে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে। কিন্তু কিউই ফাস্টবোলার ট্রেন্ট বোল্টের ওই ডেলিভারি একটু থেমে আসে। ড্রাইভিং জোনে থাকলেও পিচ পড়ার পর একটু স্লথ অাসা ডেলিভারি খানিক সুইংও করে। তাতেই ধরা পড়েন সৌম্য। শটের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শর্ট কভারে ক্যাচ চলে যায়। গ্র্যান্ডহোম সামনে মাটিতে শরীর ফেলে তা ধরে ফেললে শতরানের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় সৌম্যকে। টেস্ট ক্যারিয়ারের ছয় নম্বর ইনিংসে প্রথম ওপেন করার সুযোগ পেয়ে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও বাতাসের মধ্যে ঘাসযুক্ত উইকেটে তিন অঙ্কে পৌঁছাতে না পারলেও সৌম্য যা খেলেছেন, তার প্রশংসা না করে উপায় নেই। টিভি ধারাভাষ্যকারদের মুখে সৌম্য বন্দনা। সমালোচকদের মুখ বন্ধ। এটা ঘরের মাঠের ঠেলা গাড়ীর গতির নীচু বাউন্সি উইকেট নয়, অনেক বেশি বাউন্স। একটু ঠুকে দিলেই বল মুখ ও মাথা সমান উচ্চতায় চলে এসেছে। ম্যুভমেন্টও ছিল যথেষ্ঠ। সেখানে বুক চিতানো ব্যাটিং করে সৌম্য দেখিয়ে দিলেন ‘আমি পারি। আমার টেস্টে ওপেন করার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে।’ সব সময় সামর্থ্য থাকলেও হয় না। সুযোগও পেতে হয়। এতদিন নিজের অফফর্ম এবং তামিমের সাথে ইমরুল কায়েসের চমৎকার জুটি গড়ে ওঠায় জায়গা হচ্ছিল না। এ সত্য অনুভব করেন সৌম্যও। তাইতো মুখে এমন কথা, আসলে আমি ওপেন করতে চাই। কিন্তু জায়গা কই? তামিম ভাই আর ইমরুল ভাই ওই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। দুজনই দারুণ সফল। তাদের জায়গায় ঢোকা সম্ভব না। তারপরও আমি মনে মনে ওপেন করার কথা ভাবতাম। যেভাবেই আসুক অবশেষে একটা সুযোগ এসেছে। আমি চেস্টা করেছি ইমরুল ভাইয়ের জায়গাটা পূরণ করার।’সৌম্য যোগ করেন, ‘কত রান করবো, হাফ সেঞ্চুরি না সেঞ্চুরি? ঠিক ওভাবে ভাবিনি। চিন্তা ও লক্ষ্য ছিল যত সময় সম্ভব ক্রিজে টিকে থাকবো। জানতাম- উইকেটে বেশি সময় থাকা মানেই বোর্ডে রান ওঠা। স্কোর লাইন লম্বা চওড়া হওয়া।’এনইউ/পিআর

Advertisement