৫টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববাসীকে সমন্বিতভাবে কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী এবং নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরসনে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় গত বুধবার সন্ধ্যায় সুইজারল্যান্ডের দাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত কোনো নেতা হিসেবে তিনি যোগদান করেন। এই সফরে বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মত বিনিময়ও করেন তিনি। নানা দিক থেকেই এই সফরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ুর পরিবর্তন জনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় যে সমস্ত দেশ রয়েছে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এই বিষয়টির প্রতি বিশ্বনেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তি অনুসমর্থন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বিশ্ব সম্প্রদায় এবং ব্যবসায়ীদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষক, জেলে, কারুশিল্পী, নারীরা দিনকে দিন অধিকতার ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে আমাদের ভালোভাবে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।’কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চাপ সহনশীল জাত উন্নতকরণ ও উদ্ভাবন, পানি সহিষ্ণু ধান উৎপাদন, সৌর বিদ্যুৎ ভিত্তিক সেচ পাম্প চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। জীবন, শস্য, কৃষি, সম্পদ রক্ষায় সমাধান খুঁজতে গবেষণা ও বিশ্ব বাণিজ্য বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন অলাভজনক মডেল উদ্ভাবন, অংশীদারিত্বের জন্য এবং আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নবায়নযোগ্য এবং ক্লিন এনার্জি, দক্ষ জ্বালানি প্রযুক্তি, যন্ত্র, নিরাপদ উৎপাদন, নগর সেবায় যেতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করার চেষ্টা করছি। চাপ সহনশীল জাত উন্নতকরণ ও উদ্ভাবন, পানিসহিষ্ণু ধান উৎপাদন, সৌরবিদ্যুৎ ভিত্তিক সেচ পাম্প চালু করেছি। সুখী-সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়তে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি ধনীদেশগুলোর দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। তথ্য-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এই শতাব্দীতে গোটা বিশ্বকে তুলনা করা হচ্ছে একটি গ্রামের সঙ্গে (গ্লোবাল ভিলেজ)। সুতরাং কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলকে উন্নয়ন বঞ্চিত রেখে সভ্যতার এগিয়ে চলা অসম্ভব। এ জন্য সমতার বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হোক সে জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য, সন্ত্রাসদমন কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে। বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে যে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে সেটিও কাজে লাগাতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সুইজারল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী এক উজ্জ্বল বাংলাদেশকেই তুলে ধরেছেন। যে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল। এইচআর/এমএস
Advertisement