বিশেষ প্রতিবেদন

সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশেও কাটেনি বিচারপতি সংকট

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে দেখা দিয়েছে বিচারপতি সংকট। অবসর, মৃত্যুবরণ, অসুস্থ এবং দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া চলতি বছর অবসরে যাচ্ছেন আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের সাত বিচারপতি। বর্তমানে ৯৭ জন বিচারপতি দিয়ে পাঁচ লক্ষাধিক মামলা পরিচালনা করছেন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ।সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ না দিলে উচ্চ আদালতে মামলাজট আরও তীব্র হবে। এতে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বিচারপ্রার্থীরা। তবে আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, বিচারপতি নিয়োগে আইন তৈরি করে অচিরেই সংকট সমাধানের চেষ্টা করা হবে।এর আগে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংকট কাটাতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আটজন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ, যা এখনও আলোর মুখ দেখেনি।আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও এখন আছেন আটজন, যাদের মধ্যে দুজন বিচারপতি অবসরে যাবেন অল্প সময়ের মধ্যে। ২০১৬ সালে আপিল বিভাগের জন্য নতুন এক এজলাস কক্ষ তৈরি করা হলেও বিচারক কম থাকায় এখনও ব্যবহার করা যায়নি। হাইকোর্ট বিভাগের ৮৯ জন বিচারপতি থেকে চলতি বছর অবসরে যাচ্ছেন পাঁচজন বিচারপতি। এছাড়া অবসর নেবেন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি। ফলে এ বছর সাতজন বিচারপতি যাচ্ছেন অবসরে। হাইকোর্টে আটজন বিচারপতি নিয়োগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে সুপারিশ করা হলেও বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি তার এক বক্তব্যে জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ করা সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেছিলেন।সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন নয়জন। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। বাকি আটজনের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা আগামী ৭ জুলাই এবং বিচারপতি মো. নিজামুল হক আগামী ১৪ মার্চ অবসরে যাবেন।হাইকোর্ট বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন ৯০ জন। এর মধ্যে ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকি ৮৯ জনের মধ্যে পাঁচজন চলতি বছর অবসরে যাবেন।বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভূঞা ৬ সেপ্টেম্বর, বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক ৩০ ডিসেম্বর, বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ ২ জানুয়ারি, বিচারপতি শামীম হাসনাইন ২৩ এপ্রিল এবং বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ২৯ মে অবসরে যাবেন।জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বলেছেন, ‘আমেরিকায় ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন, ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক। জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ প্রদান করা এখন সময়ের দাবি।’তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আপিল বিভাগে ৯ জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৯ জন বিচারকের মধ্যে তিনজন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে চারজন বিচারক গুরুতর অসুস্থ। ফলে বিভিন্ন সময় বেঞ্চ গঠনে আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তাদের মধ্য থেকে ২০১৭ সালে সাতজন বিচারক অবসরগ্রহণ করবেন। ফলে বেঞ্চ গঠনে জটিলতা আরও প্রকট হবে।’প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘২০১৬ সালের আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আমি আটজন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলাম। দীর্ঘ আলোচনার পর পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এ সুপারিশ প্রেরণ করা হলেও এ নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি। সিনিয়র আইনজীবীরা বলছেন, দুই বিভাগে ৫ লাখেরও বেশি মামলার বিপরীতে বিচারকের এ সংখ্যা অপ্রতুল। দ্রুত বিচারপতি নিয়োগের দাবি জানান তারা। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলছেন, কোনো অবস্থাতেই যেন মামলার জট আর না বাড়ে।এমনিতেই মামলার জট রয়েছে। সে অবস্থা বিবেচনা করে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিত। আরেক আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি এটা তার নজরে নিয়ে অধিক সখ্যক বিচারক নিয়োগ দেবেন এটাই তার প্রত্যাশা।আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, বিচারপতি নিয়োগে আইনি কাঠামো তৈরির কাজ চলছে। বিচারপতি সংকট হলেই সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে প্রচলিত নিয়মে নিয়োগ দেয়ার কথা তিনি জানান। তিনি বলেন, যখনই প্রয়োজন তখনই বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি বিজ্ঞ বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে একটা আইন এ বছরের মধ্যে হবে।দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ করা না গেলে মামলাজট আরও তীব্র হবে সর্বোচ্চ আদালতে। ন্যায়বিচারের সুফল থেকে বঞ্চিত হবেন বিচারপ্রার্থীরা, এমন মত সিনিয়র আইনজীবীদের।এফএইচ/ওআর/এমএস

Advertisement