কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হওয়া মামলা শেষ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বছরের পর বছর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসব মামলার নিষ্পত্তি তো হচ্ছেই না বরং উচ্চ আদালতে রিট চলাকালে পদোন্নতি দিয়ে আরো নতুন নতুন মামলায় জড়িয়ে পড়ছে কমিশন।কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা ও পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতে হওয়া এসব মামলা কমিশন থেকে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য কমিশন থেকে আইনজীবী প্যানেলও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই প্যানেলের প্রধান করা হয়েছে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিককে।এ পর্যন্ত প্রায় ১২টি মামলার খোঁজ পাওয়া গেছে যার অধিকাংশগুলোরই আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন সচিব। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও আসামি রয়েছেন।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধিমালার ১৫ নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসার পদে সাট-মুদ্রাক্ষরিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রির শর্তারোপ অবৈধ ও আইনবহির্ভূত এমন দাবি করে মো. শহিদুল ইসলাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট আরো পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ১২ জানুয়ারি উচ্চ আদালতে রিট করেন, যার নম্বর ১৩০৬/২০০৯।একই ধারায় ২০১০ সালের ১২জুন সিইসিসহ পাঁচজনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন আবুবকর সিদ্দিকসহ ২১ ব্যক্তি। যার নম্বর ৮৭১৮/২০১০।এই রিট আবেদনে নির্বাচন অফিসার পদে সাট-মুদ্রাক্ষরিকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রির শর্তারোপকে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী দাবি করেন তারা।এরপর ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারি একই ধারায় উপজেলা নির্বাচন অফিসার পদে সাট-মুদ্রাক্ষরিকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রির শর্তকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-১৯৭৯-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি আরেকটি রিট করেন গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান আকন্দসহ চারজন। এতে ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট আরো চার কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়। যার নম্বর ৩১২৩/২০১১।কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা ২০০৮ নিয়ে একটি রিট করেন জেলা নির্বাচন অফিস-১ ঢাকার উচ্চমান সহকারী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ ২৫জন। এই রিটে সিইসি-সচিবসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়েছে। যার নম্বর ৩৯৬৩/২০১১।রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল হোসেনসহ চারজন ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধিমালার ১৫ নম্বর ধারাকে ১৯৭৯ সালের নিয়োগ বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে সচিবসহ সংশ্লিষ্ট আরো চারজনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন, যার নম্বর ৭৮৪৪/২০১১।এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার চলতি দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর ইসি সচিবালয়ে উপসচিব প্রশাসন (১)-এর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে স্টেনো-টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটরদের উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা প্রদান নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠতা তালিকার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সচিবসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচজনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন, যার নম্বর ১০২১৭/২০১১।তাছাড়া ইসি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদসহ ৯ জন বাদী হয়ে নিয়োগ বিধিমালা ২০০৮-এর ১৫ নম্বর ধারার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নিয়োগ বিধিমালা ১৯৭৯-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক দাবি করে ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট চারজনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে রিট করেন, যার নম্বর ১২০২/২০১২।এদিকে ২০১২ সালের ২৩ জানুয়ারি জারি করা পত্রে ইসি সচিবালয়ের লাইব্রেরিয়ান পদে কর্মরত মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণীর সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে পদায়ন করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি নিজেই এ পত্রকে চ্যালেঞ্জ করে সিইসি-সচিবসহ ৯ জনকে বিবাদী করে রিট করেন, যার নম্বর ১৫৩৮/২০১২।একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা ও পদোন্নতি নিয়ে উচ্চ আদালতে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। আমরা কমিশন থেকে এসব মামলা মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিমধ্যেই আইনজীবীরা মোকাবিলা শুরু করেছেন এবং বিভিন্ন রুলের জবাব দিয়েছেন।”ইসির আইনজীবী প্যানেলের প্রধান ড. শাহদীন মালিক বলেন, “আদালতে এসব বিভাগীয় মামলার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। অন্যান্য মামলার ভিড়ে এগুলো নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লাগে। এছাড়া মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি অনেকাংশেই নির্ভর করে বাদীর তৎপরতার ওপর। ”তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে। ঈদের আগে মামলার শুনানি হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো শুনানি শুরু হবে।”
Advertisement