বিশেষ প্রতিবেদন

বিশেষজ্ঞ নির্বাচনে ছিল বড় ভুল

চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের উচ্চমানের শিক্ষক, লেখকদের সমন্বয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কালিকুলাম প্রণয়নের পরও কেন এতো ভুল? এজন্য দায়ী কারা? এসবের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনুসন্ধানে ধরা পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম অসঙ্গতি, যা তুলে ধরা হলো জাগো নিউজের তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।১ জানুয়ারি সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব। ২০১০ থেকে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর পাঠ্যপুস্তকে নানা ভুল-অসঙ্গতি থাকলেও এবার তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণে সারাদেশে ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের দাবি উঠেছে।দেখা গেছে, যারা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তারা সে বিষয়ে পরিমার্জনের দায়িত্ব পাননি। বরং ভিন্ন বিষয়ের বইয়ের পরিমার্জন করায় অসংখ্য ভুলের সৃষ্টি হয়েছে। প্রমাণ মিলেছে যে, রসায়ন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমানকে গবেষণার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের। হিসাববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মো. তৈয়বুর রহমানকে প্রথম শ্রেণির গণিত ও চতুর্থ শ্রেণির ইসলাম এবং নৈতিক শিক্ষা বইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক লানা হুমায়রা খানকে দেয়া হয় তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বই। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞকে সে বিষয়ে দায়িত্ব না দিয়ে অন্য বিষয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ কারণেই পাঠ্যপুস্তকে ঘটেছে বিকৃতি। ভুলভাবে ছাপা হয়েছে পাঠ্যবই। এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্টদের।  এছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ৬৩টি প্রথম শ্রেণির পদের মধ্যে অনেকেই বছরের পর বছর পদ দখল করে রেখেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।যদিও শিক্ষামন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। এ কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রূহি রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন, যাদের কারণে পাঠ্যপুস্তকে ভুল-ভ্রান্তি তাদের সবাইকে নজরে রাখা হয়েছে। প্রমাণ হলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এসব নিয়ে অপপ্রচার না করারও পরামর্শ দেন তিনি।এনসিটিবি সূত্র জানায়, এনসিবিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) ড. মো. আবদুল মান্নান ২০০৭ সালে সম্পাদক পদে প্রেষণে যোগদানের পর ২০১৪ সালের ২৯ জুন সদস্য পদের দায়িত্ব পান। উৎপাদন নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আব্দুল মজিদ ২০০১ সালের ১০ অক্টোবর থেকে বর্তমানে বোর্ডে কর্মরত। একইভাবে বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইয়া ২০১১ সালের ৩১ মার্চ থেকে। ঊর্ধ্বতন ভাণ্ডার কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক দর্শন বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক হলেও তাকে ৯ম শ্রেণির ক্যারিয়ার শিক্ষা বইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।  বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপকদের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞের দায়িত্ব দেয়া হয়। ঊর্ধ্বতন বিশেজ্ঞদের মধ্যে সৈয়দ মাহফুজ আলী ইতিহাসের শিক্ষক হলেও ৮ম ও ৯ম শ্রেণির সঙ্গীত বিষয়ের দায়িত্ব পান। তিনি ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে এনসিটিবিতে কর্মরত। চৌধুরী মুসাররাত হোসেন ইতিহাসের শিক্ষক হলেও পঞ্চম শ্রেণির বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে কর্মরত। জুবেরী আলেয়া আক্তার দর্শনের শিক্ষক হলেও তাকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণির বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে এনসিটিবিতে কর্মরত। লানা হুমায়রা খান অর্থনীতির শিক্ষক হলেও দেয়া হয় তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ের দায়িত্ব। এ বইয়ের কবিতা বিকৃতির জন্য ইতোমধ্যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে।অন্যদিকে যাদের নির্দেশে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরিমার্জন হয়েছে তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অথচ পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রাথমকি তদন্তের ভিত্তিতে এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়েছে।এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মূল বিষয়গুলো লেখকরা করেন। বিশেষজ্ঞরা শুধু বানান ভুল ও অসঙ্গতি পরিমার্জন করেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ না থাকায় এমনটি ঘটেছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন তাদের একটি তালিকা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে তা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। এমএইচএম/এএইচ/এমএস

Advertisement