খেলাধুলা

কী করবে তামিমের ভাঙাচোরা দল?

আসল নাম ‘হ্যাগলি পার্ক নিউ।’ বিশাল এলাকা জুড়ে। তার দক্ষিণাংশে ‘হ্যাগলি পার্ক সাউথ।’ আয়তনে এই পার্ক  ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিনগুণ হবে। শুধু আকার আয়তনে বড় নয়। গাছপালাও অনেক বেশি। হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ হঠাৎ মনে হবে সবুজ বন।চারিদিকে গাছপালায় ভরা। খালি সবুজ আর সবুজ। একদম পরিষ্কার। ঝকঝকে। তকতকে। একটু ময়লা-আবর্জনার লেশমাত্র নেই। তারই একটা অংশে ক্রিকেট মাঠ। কোনো গ্যালারি নেই। শুধু প্রমাণ সাইজের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড। সেটাই একমাত্র স্থায়ী অবকাঠামো। আর সব অস্থায়ী। খেলার আগে তৈরি করা। প্রেসবক্স বহুদূরে, আগের দিন পর্যন্ত মিডিয়ার সবার কোনো জায়গার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে আজ চোখে পড়লো। সাইট স্কিনের পাশে সাদা তাবু খাটানো। জানা গেল- সেটাই প্রেস বক্স। মাঠের দক্ষিণ দিকে উঁচু মাটির ঢিবি। ফ্লাডলাইট নেই। দর্শক ধারণ ক্ষমতা হাজার দশেক তো হবেই। খুব বেশি দিন হয়নি এ মাঠে টেস্ট হচ্ছে। এইতো তিন বছরেরও কম সময় আগে; ২০১৪ সালের ২৬-২৯ ডিসেম্বর। নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে হ্যাগলি পার্ক ওভালের টেস্ট ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু। সর্বশেষ টেস্ট হয়েছে মাত্র দু`মাস আগে; ১৭-২০ নভেম্বর, ২০১৬। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের সাথে খেলেছে পাকিস্তান। এছাড়া এই মাঠে প্রথম ওয়ানডে হয়েছে ২০১৪ সালের ২৩ জানুয়ারি; স্কটল্যান্ড-কানাডার মধ্যে। আর শেষ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড; এইতো ২৪ দিন আগে। এই মাঠে এ পর্যন্ত তিনটি টেস্ট হয়েছে; যার দুটিতে জিতেছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড আর একটিতে ব্ল্যাক-ক্যাপসদের ৭ উইকেটে হারিয়েছে অজিরা- সেটা ২০১৬ সালের ২০-২৪ ফেব্রুয়ারি। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬-২৯ ডিসেম্বর কিউইরা ৮ উইকেটে হারায় লঙ্কানদের। খেলা শেষ হয়ে যায় চার দিনে। আর ২০১৬ সালের ১৭-২০ নভেম্বর পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে হারায় কিউইরা। এছাড়া এই মাঠে নারীদের তিনটি টেস্ট ও ছয়টি ওয়ানডে হয়েছে। এই মাঠে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ হয় ১৮৬৭ সালে। ক্যান্টাবারি ক্রিকেট দলের সাথে ওটাগো একাদশের ম্যাচ হয়েছিল প্রথম। এছাড়া প্লাঙ্কেট শিল্ডের প্রথম ম্যাচ হয় ১৯০৭ সালে। মাত্র দুই মাস আগে এই মাঠে পাকিস্তান পর্যুদস্ত হয় চরমভাবে। মাত্র তিন দিনে শেষ হয়ে যায় ম্যাচটি। ১৭ নভেম্বর বৃষ্টির কারণে কোন খেলাই হয়নি। বাকি তিন দিনে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। তিন দিনে দু`বার অলঅাউট হয় পাকিস্তান। চার কিউই পেসার টিম সাউদি (২+৩ = ৫) , ট্রেন্ট বোল্ট (২+৩ = ৫) , ওয়েগনার (০+ ৩) ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (৬+ ১ = ৭) ২০ উইকেটের সবগুলো ভাগ করে নেন। হার মানা পাকিস্তানিরা যে ১২ উইকেটের পতন ঘটায়, তার ১১ টি জমা পড়ে পেসারদের পকেটে। মোহাম্মদ আমির ৩+১ =৪, সোহেল খান (৩+০) , রাহাত আলি (৪+০) ও অকেশনাল লেগস্পিনার আজহার আলি (১) উইকেট ভাগ করে নেন। মোদ্দাকথা, উইকেট একদম পেস-বান্ধব। এক কথায় পেসারদের স্বর্গ। ইতিহাস জানাচ্ছে, এই মুহূর্তে হ্যাগলি ওভালকেই ধরা হয় নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে পেস বোলিং সহায় উইকেট। সেখানে বাংলাদেশ খেলবে স্মরণাতীতকালের সবচেয়ে ভাঙ্গাচোরা ও দুর্বল দল নিয়ে। নিয়মিত অধিনায়ক ও মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা মুশফিকুর রহীম, ওপেনার ইমরুল কায়েস এবং টেস্টে দলের সবচেয়ে ভালো ও ধারাহিক পারফরমার মুমিনুল হক নেই। ইনজুরির কারণে তিনজনই খেলতে পারবেন না। তাদের ছাড়া কাল এই হ্যাগলি ওভালে মাঠে নামবেন টাইগাররা। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর সাকিব আল হাসান ছাড়া ব্যাটিং লাইন-আপের সবাই নবীন। সাব্বির রহমান অবশ্য প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করে সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। সৌম্য সরকার আবার টেস্টে সুযোগ পেয়েছেন। উইকেটকিপার কাম মিডল-অর্ডার নুরুল হাসান সোহান এবং নাজমুল হোসেন শান্ত- দুই তরুণের অভিষেক হচ্ছে। বোলিং লাইন-আপ মোটামুটি অপরিবর্তিতই আছে। দেখা যাক, ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তামিম ইকবালের নেতৃত্বে এমন ভাঙাচোরা দল কী করে? এনইউ/জেআইএম

Advertisement