চিড়িয়াখানা নিয়ে মানুষের উৎসাহের যেন কমতি নেই। সৃষ্টির রূপ খোঁজার পিপাসা নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিড়িখানায় ভিড় জমায়। খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখার বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনও এসেছে বেশ। বিশ্বমানের করে তুলতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। সম্প্রতি সরেজমিনে জাতীয় চিড়িয়াখানার চিত্র তুলে এনেছেন জাগো নিউজ-এর প্রতিবেদকরা। প্রতিবেদনে চিড়িয়াখানার হালচাল, পরিবর্ধন-পরিবর্তন ও প্রাণীকূলের নানা দিক উঠে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সায়েম সাবু, মামুন আব্দুল্লাহ ও আবু সালেহ সায়াদাত। ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম।বছরে ৬০ থেকে ৬৫ লাখের বেশি দর্শক সমাগম হয় বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায়। গড় হিসাবে প্রতিদিন ২০ হাজার দর্শনার্থী। টিকিট কেটে একক কোনো জায়গায় এতো দর্শনার্থী প্রবেশ দেশের আর কোথাও হয় না। তারপরও দর্শকবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি মিরপুরের জাতীয় এই চিড়িয়াখানা। ফলে শত চেষ্টার পরও ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব জু অ্যান্ড অ্যাকুরিয়ামসের (ওয়াজা) সদস্যও হতে পারেনি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানাটি। এছাড়া চিড়িয়াখানার বর্তমান পরিবেশ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তবে সম্প্রতি চিড়িয়াখানার সার্বিক পরিবেশ কিছুটা উন্নত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। হকারদের উৎপাতও কমেছে কিছুটা।সোমবার চিড়িয়াখানার বর্তমান পরিবেশ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো-নজরুল ইসলাম বলেন, এ চিড়িয়াখানা আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ। বিশ্বের অন্যান্য চিড়িয়াখানার চেয়ে প্রাণীর সংখ্যাও অনেক বেশি। কিন্তু ওয়াজার সদস্য না হওয়ায় নতুন প্রাণীর সংযোজন, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।তিনি জানান, চিড়িয়াখানার অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি পূরণে মাস্টার প্ল্যান হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাকে বিশ্বের এক নম্বর আকর্ষণীয় চিড়িয়াখানা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। সে অনুসারেই কাজ চলছে।তিনি আরও জানানম এই প্ল্যান অনুসারে জাতীয় চিড়িয়াখানার বর্তমান অবকাঠামো পরিবর্তন করে দর্শকদের জন্য একমুখী রাস্তা তৈরি করা হবে। চিড়িয়াখানা এলাকার উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে প্রধান ফটক এবং অন্যান্য ছোট ফটক (শিশু পার্ক), সুরক্ষা দেয়াল, দিকনির্দেশক, সব শ্রেণির মানুষের সহজে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ি, দর্শকদের জন্য বসার ব্যবস্থা (ফুটপাত এবং পার্কে ছাউনি এবং ছাউনি ছাড়া), রেলিং, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার ও বিভিন্ন গাছের পাত্র, রাস্তায় এবং বাগানে আলোর ব্যবস্থা, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, দর্শকদের জন্য আলাদা রাস্তা (একমুখী) এবং দেয়াল ও বনায়ন (ভূপ্রাকৃতিক) করা।এছাড়া চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাঁচা সম্পূর্ণভাবে বন্য আবহে তৈরি করতে একজন জাপানি জু-আর্কিটেকচার এবং একজন জু-কনসালটেন্টের সহায়তা নেয়া হবে। প্রচলিত পদ্ধতির প্রাণী খাঁচাকে বদলে আধা প্রাকৃতিক, প্রাণীবান্ধব ও তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয়বিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা হবে।দর্শনার্থীদের জন্য চিড়িয়াখানার সার্বিক পরিবেশ উন্নত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভেতরে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী এবং বাইরে র্যাব-পুলিশ থাকে। এছাড়া ভেতরে পুলিশ টহল দেয়। যেন দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা পোহাতে না হয়। আগে হকার ও প্রতারক চক্র নানাভাবে দর্শকদের হয়রানি করতো। এখন তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।প্রাণীদের খাবারের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ২০১৫ সালের নভম্বরে কিউরেটর পদে যোগ দেয়া নজরুল জানান, সব প্রাণীকে মানসম্মত ও সঠিক পরিমাণের খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো প্রাণীর খাদ্যসংকট বা চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা নেই। আমরা কঠোর নজরদারির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করছি।এক সময় চিড়িয়াখানাটিতে ট্রপির, লাল পাণ্ডা, চিতাবাঘ, কালো বাঘ, বনমানুষ, শিম্পাঞ্জি ছিল। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর নতুন করে আনা হয়নি। এছাড়া উটপাখি, কেশুয়ারি, কেঙ্গারু, গণ্ডার দুটি করে থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একটি করে রয়েছে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্র নজরুল ইসলাম জানান, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির আড়াই হাজারেরও বেশি প্রাণী অাছে। ভবিষ্যতে সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। ওয়াজার সদস্য না হওয়ায় এ বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে শিগগিরই উটসহ কয়েকটি প্রাণী যুক্ত করা হবে।দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখন চিড়িয়াখানার পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভালো। দুর্গন্ধ ও ময়লা-আবর্জনা নেই বললেই চলে। যে কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে একটি দিন বা এক বেলা ঘুরে যেতে পারেন। এতে অবশ্যই ভালো একটা সময় কাটবে।এএসএস/এএস/এমএ/জেডএ/আরআইপি
Advertisement