চিড়িয়াখানা নিয়ে মানুষের উৎসাহের যেন কমতি নেই। সৃষ্টির রূপ খোঁজার পিপাসা নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চিড়িখানায় ভিড় জমান। খাঁচায় বন্দি প্রাণীদের খুব কাছ থেকে দেখার বাসনা মানুষের স্বভাবজাত। জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিকতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ। তবে সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তনও এসেছে বেশ। বিশ্বমানের করে তুলতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। সম্প্রতি সরেজমিনে জাতীয় চিড়িয়াখানার চিত্র তুলে এনেছেন জাগো নিউজ-এর প্রতিবেদকরা। প্রতিবেদনে চিড়িয়াখানার হালচাল, পরিবর্ধন-পরিবর্তন ও প্রাণিকূলের নানা দিক উঠে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সায়েম সাবু, মামুন আব্দুল্লাহ ও আবু সালেহ সায়াদাত। ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম।ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত জাতীয় চিড়িয়াখানার চেহারা বদলে যাচ্ছে। এটিকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক চিড়িয়াখানা হিসেবে তৈরি করতে আমুল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এজন্য দেশি বিদেশি পরামর্শকদের সমন্বয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যানও করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলকে দায়িত্ব দেয়া হবে। পরবর্তীতে বুয়েট টিম বিদেশি পরামর্শকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে।আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি মৎস ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বুয়েটের সঙ্গে চুক্তি করবে। গত সোমবার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকার জাতীয় ও রংপুরের চিড়িয়াখানা উন্নয়নে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা রয়েছে। গত বছর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কমিশন এই প্রকল্প অনুমোদনের আগে একটা মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়।এই অবস্থায় মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ও বিদেশি এক্সপার্টদের পরামর্শ নেয়া হবে। এজন্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। চুক্তির পরবর্তী এক বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান শেষ হবে বলে তিনি জানান।চিড়ায়াখানা কিউরেটর অফিস সূত্র জানায়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানার প্রাণীরা ফিরে পাবে বনের পরিবেশ আর দর্শকরা পাবেন উন্নত বিশ্বের আদলে ব্যতিক্রমী চিড়িয়াখানা। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম দেশের দুই সরকারি চিড়িয়াখানাকে (ঢাকা ও রংপুর) বিশ্বমানে উন্নীত করতে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।‘ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানা আধুনিকায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান চিড়িয়াখানার পরিবেশ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে ভূপ্রাকৃতিক, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রাণীবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে। নতুন এই চিড়িয়াখানায় যেমন প্রাণীদের জন্য রাখা হচ্ছে সম্পূর্ণ বন্য পরিবেশ, তেমনই দর্শকদের জন্যও থাকবে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।জানা গেছে, এই প্রকল্পে জাতীয় চিড়িয়াখানার ১৮৬ একর জমিকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হবে। জাতীয় চিড়িয়াখানার বর্তমান অবকাঠামো পরিবর্তন করে দর্শকদের জন্য একমুখী রাস্তা তৈরি করা হবে। চিড়িয়াখানা এলাকার উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে, প্রধান ফটক এবং অন্যান্য ছোট ফটক (শিশু পার্ক), সুরক্ষা দেয়াল, দিক নির্দেশক, সব শ্রেণির মানুষের সহজে যাতায়াতের জন্য সিড়ি, দর্শকদের জন্য বসার ব্যবস্থা (ফুটপাত এবং পার্কে ছাউনি এবং ছাউনি ছাড়া), রেলিং, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার ও বিভিন্ন গাছের পাত্র, রাস্তায় এবং বাগানে আলোর ব্যবস্থা, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, দর্শকদের জন্য আলাদা রাস্তা (একমুখী) এবং দেয়াল ও বনায়ন (ভূপ্রাকৃতিক)।তথ্যমতে, চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাঁচাকে সম্পূর্ণভাবে বন্য আবহে তৈরি করতে একজন জাপানি জু-আর্কিটেকচার এবং একজন জু-কনসালটেন্টের সহায়তা নেয়া হবে। প্রচলিত পদ্ধতির প্রাণী খাঁচাকে বদলে আধা প্রাকৃতিক, প্রাণীবান্ধব ও তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় বিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা হবে।দর্শকদের জন্য খাঁচার নিরাপত্তায় স্টিল গ্রিলের সঙ্গে বিশেষায়িত কাচের আবরণ ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও ব্যবহার হবে লোহার জাল। বিশেষ কাচের দেয়াল থাকায় দর্শকরা সবচেয়ে কাছ থেকে প্রাণীদের দেখতে পারবে। প্রত্যেক প্রাণীর নিজস্ব আবাসস্থলের মত পরিবেশ তৈরি করতে খাঁচার ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চিড়িয়াখানায় বসানো হবে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের দশটি ম্যুরাল। চিড়িয়াখানার কিউরেটরের দফতর, একটি প্রধান এবং চারটি নিরাপত্তা অফিস, প্রাণী হাসপাতাল ছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য নতুন একটি অফিসার্স কোয়ার্টারও তৈরি করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়।এএসএস/এএস/এমএ/এফএ/এআরএস/আরআইপি
Advertisement