ইত্তেফাক থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর। হেঁটে যেতে সময় লাগে মাত্র ৫ থেকে ৭ মিনিট। অথচ যে কোনো কার্মদিবসে অফিস শুরুর আগে রিক্সা বা গাড়িতে করে এই পথটুকুই অতিক্রম করতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। একই অবস্থা শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় এবং দৈনিক বাংলা থেকে পল্টন মোড়। এটাই চিরচারিত নিয়ম হয় উঠেছিল রাজধানীর অন্যতম এই ব্যস্ত অঞ্চলটিতে।তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে মতিঝিল-পল্টন থেকে হকার উচ্ছেদের পর রাজধানীর এই বাণিজ্যিক এলাকায় চিরচারিত সেই যানজট দেখা যাচ্ছে না। মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটেই ইত্তেফাক থেকে শাপলা চত্বর, শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা মোড় এবং দৈনিক বাংলা থেকে পল্টন মোড়ে যাওয়া যাচ্ছে।গত ১৫ জানুয়ারি মতিঝিল-পল্টন এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এরপর গত তিন কার্যদিবস জাগো নিউজের এই প্রতিবেদক সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মতিঝিল-পল্টন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং কমপক্ষে ২৫ জনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় এ এলাকায় হকারদের বসতে দেখা যায়নি এবং কোন যানজটের চিত্রও চোখে পড়েনি।তবে দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকায় রাস্তার ওপর বরাবরের মতো ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করা অবস্থায় দেখা গেছে। এতে দিলকুশার ভিতরের রাস্তায় (বঙ্গভবন সংলগ্ন) যানজট এবং পথচারিদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. পারভেজের সঙ্গে জাগো নিউজের কথা হয় মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি)। তিনি বলেন, সাধারণত যাত্রাবাড়ির ধোলাইপাড় থেকে মতিঝিলে আসতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। তবে এখন যাত্রাবাড়ি-সায়েদাবাদ অঞ্চলে যানজট তেমন একটা নেই। কিন্তু ইত্তেফাক মোড়ে এসে প্রতিদিনই যানজটে পড়তে হয়। প্রায় দিনই ইত্তেফাক মোড়ে এসে গাড়ির চাকা আর ঘুরতেই চায় না। ফলে প্রতিদিন বাধ্য হয়েই ইত্তেফাক থেকে হেঁটে অফিসে আসতে হয়।‘তবে গত দুই দিন ধরে আর এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না। ইত্তেফাক থেকে মতিঝিল কোন যানজট নেই। রাস্তা একেবারে ফাঁকা থাকায় গাড়ি একটানে শাপলা চত্বরে চলে আসছে। ফুটপাতেও কোন হকার দেখা যাচ্ছে না। ফলে হাঁটা-চলায় কোন সমস্যা হচ্ছে না’ বলেন পারভেজ।জিটিভির স্টাফ রিপোর্টার তৌহিদ রানা বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, সেগুনবাগিচা থেকে প্রতিদিন ব্যাংক পাড়ার (মতিঝিল) অ্যাসাইমেন্টে আসতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট লাগে। তবে গত দু’দিন ধরে মাত্র ১০ মিনিটেই আসা যাচ্ছে।তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে এটা ভালো উদ্যোগ। একই সঙ্গে দাবি জানাবো অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে যত্রতত্র ব্যক্তিগত পরিবহন রাখার বিরুদ্ধেও যাতে কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নেয়। বুধবার দৈনিক বাংলার একটি প্রিন্টিং অফিসের কর্মী মো. আলমগীর বলেন, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এলাকায় এখন কোন যানজট নেই। অথচ গত সপ্তাহেও এই এলাকার সমগ্র রাস্তাজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। আর ফুটপাতের ওপর বিভিন্ন ধরনের দোকান বসানোয় ফুটপাত দিয়ে হাঁটাই যেত না।তিনি আরও বলেন, এখন ফুটপাতে কোন দোকান না থাকায় চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না। রাস্তায় কোন যানজট হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি বর্তমানে মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এলাকায় যে অবস্থা বিরাজ করছে এটা যেন অব্যহত থাকে। কিছুদিন পরেই যেন আবার আগের অবস্থায় ফিরে না যায়।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে নগর ভবনে হলিডে মার্কেট চালু ও ফুটপাত দখল সমস্যা নিয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর মেয়র ১৫ জানুয়ারি থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল ও রমনা এলাকায় কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন।সাঈদ খোকন সে সময় বলেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিলসহ সিটি কর্পোরেশনের কোনো এলাকায় জনগণের চলাচলের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না। অফিস ছুটির দেড় ঘণ্টা পর অবস্থানভেদে হকাররা তাদের ব্যবসা করতে পারবেন। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের হকার তালিকার মধ্যে যদি কেউ পেশা ছেড়ে চাকরি কিংবা বিদেশ যেতে আগ্রহী হন তাহলে ডিএসসিসিতে আবেদন করলে তাদের সিটি কর্পোরেশন সহযোগিতা করবে।সাঈদ খোকন বলেন,লাইনম্যানধারীরা আসলেই চাঁদাবাজ। হকার নেতাদের তালিকা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। হকারদের আইডি কার্ডের একটা প্রস্তাব এসেছে আমরা সেটা চালু করতে পারি। মেয়রের ওই ঘোষণার পর গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল-পল্টন এলকায় হকারমুক্ত অভিযান চালানো হয়। ভেঙে দেয়া হয় ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত দোকান।এমএএস/এমএমজেড/পিআর
Advertisement