নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের দেশ কাঁপানো মামলার রায়ের পর এখন এ কথা বলা যায় যে ‘সাত খুন মাফ হওয়ার’ দিন শেষ। সাধারণত বিচারহীনতা এবং অরাজক অবস্থা বোঝাতে এই কথাটি বলা হয়। কিন্তু ঘাতকের দিন সব সময় সমান যায় না। বিচারের বাণীও নিরবে নিভৃতে কাঁদেনা সব সময়। যদিও আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারই একটি সমাজের কাঙ্খিত বিষয়। এর ব্যতিক্রম হলেই বরং তা সমাজের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। অবশেষে গতকাল সোমবার সেই কাঙ্খিত রায় এল। যে ঘটনায় গোটা দেশ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সেই হৃদয় বিদারক হত্যাকাণ্ডের রায়ে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে বাদিপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আশান্বিত হয়েছেন দেশের মানুষও। এখন রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা যায় সে ব্যাপারে জোর দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।এই মামলার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বেআইনি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া এবং যার ফলশ্রুতিতে ব্যাপকসংখ্যক সদস্যের শাস্তি হওয়া। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয় যে যারা আইনের রক্ষক তারাই আইন হাতে তুলে নেবেন। র্যাবের মতো প্রশিক্ষিত বাহিনীতে দুষ্টচক্রের অবস্থান এই বাহিনীর মর্যাদাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছিল। অপরাধীর শাস্তি হওয়ায় অন্যরাও এখন একটি বার্তা পেল। অপরাধ করলে যে কেউ পার পায় না- সাত খুন মামলার রায় আবারো সেটি প্রমাণ করলো। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টিও এই ঘটনায় প্রতীয়মান। নূর হোসেন হয়ে ওঠেছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। সব ঘটনার মূলে এই নূর হোসেন। সমাজে নূর হোসেনরা কোনো মহলের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তা কি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে সে ব্যাপারেও শিক্ষা নিতে হতে। নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। তাকে এনে শাস্তি দেয়া গেছে এটা স্বস্তির বিষয়। সাত খুনের ঘটনায় চরম নৃশংসতা দেখিয়েছিল অপরাধীরা। ক্ষমতার দম্ভ এবং অর্থ লোভ মানুষকে কতোটা দিগভ্রান্ত ও হিংস্র করতে পারে তা যেন বলে দিচ্ছে সাত খুনের ঘটনাটি। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভ কিংবা অবৈধ অর্থের জোর যে আখেরে কাজ দেয় না সেই শিক্ষাও নিতে হবে এই রায় থেকে। সমাজে যখন ন্যায়ের শাসন বাধাগ্রস্ত হয় তখনই এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশে ন্যায় বিচারের পথ সব সময় উন্মুক্ত রাখতে হবে। তবেই অপশক্তির দর্পচূর্ণ হবে। এইচআর/পিআর
Advertisement