বিশেষ প্রতিবেদন

স্বর্ণ চোরাচালান : বিমানের পাঁচ কর্মকর্তা তিন বছর ধরে উধাও

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো হোল থেকে উদ্ধারকৃত একশ ২৫ কেজি স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় অভিযুক্ত বিমানের বরখাস্তকৃত ৫ কর্মকর্তা তিন বছর ধরে উধাও। চোরাচালানকারী এই কর্মকর্তারা দেশে আছেন নাকি দেশের বাইরে তা জানেন না পুলিশ, গোয়েন্দা কিংবা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা।পালিয়ে বেড়ানো বিমানের এই ৫ কর্মকর্তা হচ্ছেন, জুনিয়র সিকিউরিটি অফিসার কামরুল হাসান, ক্লিনিং সুপারভাইজার আবু জাফর, মেকানিক মাসুদুর রহমান, প্রকৌশল হ্যাঙ্গারের মেকানিক ওসমান গনি ও হ্যাঙ্গারের কর্মী রায়হান। বিমান কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এ ঘটনায় জড়িত কক্সবাজারের এক দর্জি এবং ভারত ও নেপালের দুই ব্যবসায়ী। ২০১৩ সালের ২৪ জুলাই দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজের (এয়ারবাস) কার্গো হোল থেকে একশ ২৪ কেজি ওজনের ১ হাজার ৬৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। কার্গো হোলের মতো সংবেদনশীল জায়গায় বাংলাদেশ বিমানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছাড়া কারো যাওয়ার অনুমতি নেই। প্রথমে রহস্যজনক এই মামলার তদন্তের দায়ভার দেয়া হয় শুল্ক গোয়েন্দাকে। শুল্ক গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০ কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে বিমানবন্দর কাস্টমস। ১৪ আসামি হচ্ছেন, কক্সবাজারের দর্জি জসিম, ভারতীয় নাগরিক জ্যাসন প্রিন্স, নেপালের নাগরিক গৌরাঙ্গ রোসান ও তার বাংলাদেশি এজেন্ট মিলন সিকদার। আসামি বিমানের কর্মকর্তারা হচ্ছেন, উড়োজাহাজ মেকানিক মাসুদুর রহমান, মেকানিক অ্যাসিস্ট্যান্ট আনিস উদ্দিন ভূঁইয়া, জুনিয়র ইন্সপেকশন অফিসার শাহজাহান সিরাজ, জুনিয়র সিকিউরিটি অফিসার কামরুল হাসান, ক্লিনিং সুপারভাইজার আবু জাফর, মেকানিক মজিবর রহমান, প্রকৌশল হ্যাঙ্গারের মেকানিক ওসমান গনি, ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার সালেহ আহমেদ, হ্যাঙ্গারের কর্মী রায়হান ও মাকসুদ।আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়েরের পর এর তদন্তভার দেয়া হয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে। তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ডিবির সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ। তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে আরো ৪ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পান তিনি।তারা হচ্ছেন আবদুল বারেক, মানিক মিয়া, সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং শ্রী সুব্রত কুমার দাস। এদের মধ্যে মানিক মিয়াকে গ্রেফতার করা হলেও তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। সুব্রত কুমার ও সালেহ আহমেদ জামিনে রয়েছেন। আর বারেক এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ ঘটনায় প্রায় সাড়ে ৩ বছর পেড়িয়ে গেলেও চার্জশিট দেয়াতো দূরের কথা আসামিদের এখনো গ্রেফতারই করতে পারেনি পুলিশ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কয়েক মাস আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ মিশনে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার ও প্রধান আবদুল বাতেন জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে।বিমানের পলাতক ৫ কর্মকর্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত সবাইকে গ্রেফতার করা যায় না। আমরা তদন্ত করছি। তদন্তে তাদের নাম উঠে আসলে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহা-পরিচালক ড. মইনুল খান জাগো নিউজকে বলেন, এটা সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে স্পর্শকাতর মামলা। এ ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা অধিকতর তদন্ত করেছে। তদন্তের স্বার্থে দুবাই পর্যন্ত গিয়েছে। বিমানবন্দরের সব সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে, স্পটে গিয়েছে ও সেই বিমানটিও পরীক্ষা করেছে। সহায়তাকারী ১০ জনের নাম দেয়া হয়েছে। তবে গডফাদার বা মালিকরা সাধারণ ব্যবসায়ী না। তাদের একটা কুৎসিত চেহারা আছে। তাদের সেই চেহারা উন্মোচনের দায়িত্ব তদন্ত কর্মকর্তাদের। আমরা চাই প্রকৃত আসামিদের নাম বের হয়ে আসবে। তারা সত্যিকার অর্থে বিচারের মুখোমুখি হবে। আদালতে চার্জশিট দাখিল হলে সেটা প্রকাশ হবে এবং আমরা রিভিউ করবো। যদি সন্তুষ্ট না হই আবার নারাজি দেব। আদালতের প্রয়োজনে প্রমাণাদি আদালতের কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানান ড. মইনুল। এদিকে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বিমানের কর্মকর্তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহা-ব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত ১০ কর্মকর্তার মধ্যে ৮ জন খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। তারা আর বিমানের সঙ্গে নেই। আর বাকি ২ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এআর/জেএ/এআরএস/এমএস

Advertisement