ইটের আঁকাবাঁকা সরুপথ। তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। বাতাসে ভেসে আসছে ফুলের সৌরভ। প্রকৃতি প্রেমি যে কারও মন মাতাবে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একই মনোহর দৃশ্য। গোলাপের রাজ্য এই গ্রামের নাম সাদুল্লাপুর।ঢাকার অদূরবর্তী সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদীর কোলঘেষা এ গ্রামে গত কয়েক বছর থেকে এই ফুল চাষ হচ্ছে। গ্রামের ৯০ ভাগ লোক গোলাপ চাষ করেন।এখানে মূলত মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয়। গ্রামজুড়ে সারা বছরই হয় ফুলের চাষ। লাল গোলাপের পাশাপাশি রয়েছে সাদা গোলাপ, জারবেরা ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বাগান।রোববার এই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ফুলের বাগান রয়েছে। এর সবই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।স্থানীয় ফুল চাষি আবুল হোসেন বলেন, গত ২০ বছর আগে আমার বাবা এই ফুল চাষ শুরু করেন। এরপর আমরা তিন ভাই এই কাজে জড়িয়ে পড়ি। বর্তমানে প্রায় ১২ বিঘা জমির উপর এই গোলাপ ফুলের হাষ হচ্ছে।তিনি বলেন, এ ফুল চাষ উপযুক্ত মাটি থাকার কারণে এখানে গোলাপ চাষে সাফল্য আসে। এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ বাড়তে থাকে। ফলন বেশি হচ্ছে পাকা মিলন, মিরান্ডি, লিংকন ও সাদা জাতের গোলাপের। তবে অধিক লাভজনক হওয়ায় মিরান্ডি জাতের গোলাপ চাষ হচ্ছে বেশি।ঢাকার মিরপুর দিয়াবাড়ি ট্রলার ঘাট থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ, তারপর সাদুল্লাপুর গ্রাম। ট্রলার থেকে নেমে রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গোলাপ বাগান।স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা আরিফা জাহান বলেন, ফুল আমি খুব পছন্দ করি। এ জন্য এখানে প্রায়শ ঘুরতে আসি। তিনি বলেন, এমনিতেই গ্রামগুলো শান্ত ছবির মতো। তার ওপর বিস্তৃত জমিতে লাল গোলাপের সমাহার মনকে মুগ্ধ করে।জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার ফুল বিক্রি হয় এখান থেকে, যা ঢাকার বাজারে ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ ভাগ।বিরুলিয়ার আড়াইশ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ জমিতেই হচ্ছে গোলাপ চাষ। বিরুলিয়ার কমলাপুর গ্রামে সাত হেক্টর জমিতে গোলাপ, পাঁচ হেক্টরে গ্লাডিওলাস, চাষ হয়। এছাড়া বাগ্নিবাড়ি, কাকাবর, মোস্তাপাড়া, শ্যামপুরসহ অন্যান্য গ্রামেও কম বেশি গোলাপের আবাদ হয়।স্থানীয় মোস্তাপাড়ায় রয়েছে সাবু মার্কেট। সেখানেই এই ফুল বিক্রি করেন কৃষকরা।জানা গেছে, মার্কেটে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন ফুল ব্যবসায়ী ফুল কিনতে আসেন। প্রত্যেকে ৪টি করে ফুলের বান্ডিল কিনে নিয়ে যান। প্রতি বান্ডিলে থাকে ৩০০টি ফুল। এই মার্কেট থেকে রাজধানীর শাহাবাগ, আগারগাঁও এবং খামারবাড়িতে ফুল চলে যায়। সেখান থেকে তা যায় পাড়া-মহল্লার দোকানে।কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি হেক্টরে বছরে ১৫ লাখ ফুল উৎপাদন হয়। গড়ে একটি ফুল এক টাকা করে বিক্রি করলে পাওয়া যায় ১৫ লাখ টাকা।বর্তমানে ফুলের পাইকারি দাম তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা। কিন্তু কখনও কখনও প্রতিটি ফুল এক টাকায়ও বিক্রি করা যায় না। কৃষকরা তখন ফুল কেটে ফেলে দেন।এমএ/এমএইচএম/বিএ
Advertisement