চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়েছে মাত্র। দুই আম্পায়ার বেলস তুলে প্যাভিলিয়নের দিকে পা বাড়িয়েছেন। আর বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান মমিনুল হক ও মিরাজ প্রায় ড্রেসিং রুমের সামনে। তাদের পিছনে পিছনে কিউই ফিল্ডাররাও সাজঘরের খুব কাছাকাছি। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা প্রেস কনফারেন্সে যাবার বিশেষ করে ইমরুল কায়েসের উরুর ইনজুরি আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের সর্বশেষ আপডেট জানতে তড়িঘড়ি করেই বেসিন রিজার্ভের প্রেস বক্স থেকে বেড়িয়ে বেইসমেন্টে প্রেস কনফারেন্সের নির্ধারিত জায়গায় যেতে ব্যতিব্যস্ত। এমন সময় ছুটে এলেন নিউজিল্যান্ডের নামী সাংবাদিক। চোখে মুখে রাজ্যের কৌতুহল। কণ্ঠে একটাই প্রশ্ন , ‘ আচ্ছা তুমি কি আমাকে জানাতে পারো, মাঠের পশ্চিম দিকে কে দৌড়াচ্ছে? কাঁচ ঘেরা প্রেস বক্সের ভিতর থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল মুশফিকুর রহীম রানিং করছেন। সঙ্গে ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন। আজ দুপুরেও তাকে নিয়ে ছিল রাজ্যের সংশয়। তার পক্ষে কিপিং করা সম্ভব নয়। ইমরুল কায়েসকেই গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে কাটাতে হবে। এ তথ্য সকালেই মিলল। তা হয়েছেও। ইমরুলই কীপারের ভূমিকা পালন করেছেন। সেটা মূল কর্তব্য নয়। আসল কথা হলো মুশফিকের দৌড়ানোর তাৎপর্য কি?ঐ ঝানু কিউই সাংবাদিক বলেই ফেললেন, আজ দিনের খেলা শেষে যখন মুশফিক রানিং করছে, তার মানে আগামীকাল তাকে ব্যাট হাতে নামতে দেখা যাবে। ঠিক সেটাই সত্য। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনে বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম দুটি খবর দিলেন। যার একটি ইতিহবাচক। অন্যটি নেতিবাচক অবশ্যই। তবে সেটাও চূড়ান্ত নয়। বিসিবি মিডিয়া ম্যানেজার সোজা জানিয়ে দিলেন , মুশফিকুর রহীম সোমবার ব্যাট করতে পারবেন। এবং অধিনায়ক ব্যাট হাতে নামবেন। ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলে ব্যাথা পাওয়া অধিনায়ক খুব দরকার না পড়লে আর ব্যাটিং ও কিপিং কোনটাই করবেন না, তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম।বোঝাই গেল দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে নামার প্রস্তুুতি নিচ্ছেন মুশফিক। না নিয়ে উপায়ও নেই। তামিম-মাহমুদউল্লাহর মত দুইজন অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ওদিকে উরুতে টান পড়ে আজ পড়ন্ত বিকেলে মাঠ ছাড়া ইমরুল কায়েস এক রাত্রির মধ্যে ইনজুরি কাটিয়ে কাল ব্যাট হাতে নাতে পারবেন কিনা? সন্দেহ। কাজেই দলের প্রয়োজনেই এখন মুশফিককে প্রয়োজন। এখন মুশফিকও হাতের ব্যথা নিয়েও দলের প্রয়োজন মেটাতে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। সন্দেহ নেই সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ব্যাটিং করেই দেশের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ও নিজের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাকিয়েছেন। কিন্তু অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমকেও পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। তিনি ছিলেন বড় নির্ভলতা। সাকিব মাঝে মধ্যে অফস্টাম্পের বাইরে কিছু উচ্চাভিলাষী শট খেলতে গিয়ে দু তিন বার প্রায় বিপদ ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু মুশফিক খেলেছেন একদম প্রথতাগত টেস্ট ইনিংস। নিজের অতি পছন্দর শট স্লগ সুইপ একদম না খেলে, অফস্টাম্পের বাইরে স্কোয়ার কাট এবং ফ্ল্যাশ করায় সর্বোচ্চ সতর্ক ও সাবধান থেকে মনগড়া শট খেলেননি মুশফিক। যতটা সম্ভব বলের মেধা গুণের বিচার করে ব্যাকরণ মেনে ক্রিকেটীয় শট খেলার চেষ্টাই করেছেন বেশি। তারই ফসল প্রায় নিশ্চিদ্র ইনিংস। আজ যেখানে শেষ করেছে টাইগাররা, সেখানে ঠিক অমন সাহসী, আত্মবিশ্বাসী আর প্রথাগত টেস্ট ব্যার্টিটাই যে খুব দরকার। সেই কাজে মুশফিকের চেয়ে দক্ষ-পারদর্শী আর কেইবা আছে? এআরবি/এমআর/আরআইপি
Advertisement